আজ বুধবার | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:২৮
আকার প্যাটেল : তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আক্ষরিক অর্থেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে তিরস্কার করার কয়েক ঘন্টা পর কী লেখা উচিত? ২০২৪ সালের নভেম্বরে অর্থাৎ মাত্র তিন মাস আগে রিপোর্ট করা হয়েছিল যে বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ায় আক্রমণ করার জন্য ইউক্রেনকে আমেরিকার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার ‘অনুমতি’ দিয়েছে।এর পরে রয়টার্স ‘রাশিয়ান আইন প্রণেতার দাবি ক্ষেপণাস্ত্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন বাইডেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে (শিরোনামটি পরে সংশোধিত করা হয়েছিল)। তার আগের মাস ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংকার জেপি মরগানের উদ্ধৃত একটি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘পশ্চিমা শক্তি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে’।
তিনি কেবল ইউক্রেনের যুদ্ধই নয়, গাজায় গণহত্যা এবং চীনের উত্থানকেও বৃহত্তর কিছু পরিবর্তনের জন্য অনুঘটক হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তাই ২৮শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বিখ্যাত ওভাল অফিসে যে সার্কাসটি দেখা গেল, সেটিই একমাত্র ঘটনা ছিল না যখন আমরা মানবজাতির সম্ভাব্য ধ্বংসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।
এই সব থেকে কী বোঝা যায়? প্রথমেই আসা যাক ডনাল্ড ট্রাম্প কী চান? আপাতদৃষ্টিতে এটা বলা কঠিন। কারণ তিনি সহজে অনেক কিছু নিয়ে কথা বলে দেন। ট্রাম্পের সমালোচকরা বলেন যে, তিনি আদপে বোকা এবং হিংস্র- কিন্তু দুবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী একজন ব্যক্তির সাথে এই পরিচয়ের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে ট্রাম্প জানেন তিনি কী করছেন। এককথায় বলে যেতে পারে, আমেরিকান প্রেসিডেন্টের আসল লক্ষ্য চীন।
তিনি চীনের উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে চান যাতে এটি ক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্রের সমান না হয়। তিনি চান ডলারই একমাত্র রিজার্ভ বৈশ্বিক মুদ্রা থাকুক এবং চীন যেন উৎপাদন ও রপ্তানির কিছু অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনে। আর তাই তার সমস্ত বৃহত্তর কর্মকাণ্ডকে চীন-বিরোধী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।
পূর্ববর্তী প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে আগামী কয়েক দশকে চীন মার্কিন অর্থনীতির সমান হবে এবং তারপরে তাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প তা হতে দিতে চান না। প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ যা বাইডেনের অধীনে যুক্ত করা হয়েছিল, যেমন উচ্চমানের কম্পিউটার চিপের উপর নিষেধাজ্ঞা (চীন যাতে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রগতি না করে) এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় অংশ। এই মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আসা সমস্ত চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন এবং তারপরে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যা ২রা মার্চের সপ্তাহ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন যে, এর পরিমাণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। এর ফলে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রেও উচ্চ স্তরের অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতা তৈরি হবে কারণ অনেক শিল্প একে অপরের সাথে জড়িত। অনেকেই সরাসরি ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, এটি আমেরিকান ভোক্তাদের উপর ততটাই প্রভাব ফেলবে যতটা চীনা কোম্পানিগুলোতে পড়বে, কিন্তু ট্রাম্প বারবার এই উদ্বেগকে উপেক্ষা করেছেন। ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রা ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্রিকসকে তার খোলামেলা হুমকি চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনার আরেকটি অংশ। এই যুক্তি অনুসারে ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা বিভ্রান্তিকর। সেখানকার যুদ্ধগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে যাতে চীনের মূল ব্যবসার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যায়।
চীন আমেরিকার একমাত্র সমকক্ষ প্রতিযোগী- রাশিয়া নয়, অন্য কেউ নয়। অতএব, সামগ্রিক লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার কোনও অর্থ হয় না। গাজায় দুই বছরের একটানা ও হত্যাকাণ্ডমূলক বোমাবর্ষণের অবসান ঘটে জানুয়ারিতে ইসরাইলের উপর ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এবং এখন মনে হচ্ছে মার্কিন সমর্থন উঠে যাওয়ায় ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
একবার তা ঘটলে অর্থাৎ, রাশিয়া ইউক্রেন দখলে নিলে চীনের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আরও তীব্র হবে। কিন্তু যদি তাই হয়, তাহলে ট্রাম্প কেন আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং মিত্রদের পিছনে ছুটছেন, এমনকি মেক্সিকো এবং কানাডার পিছনেও? আমি মনে করি, এই সবই আমেরিকাকে চীনের চেয়ে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ।
ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক বিশ্ব বাজারে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে এবং এটি সর্বদা ডলারকে শক্তিশালী করার দিকে পরিচালিত করে, যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পণ্য রপ্তানি করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে এবং তাই ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান। হয়তো ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন, হয়তো ভাবেননি। আমরা আগামী দিনে দেখব, কারণ চার বছর অনেক দীর্ঘ সময়। চীন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সেটাই বড় প্রশ্ন। চীনের বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে যারা মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে ইতিহাসের যেকোনো জাতির চেয়ে দ্রুত দেশের অর্থনীতি এবং শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
চীন তার অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করবে। প্রথমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান হওয়ার চেষ্টা করবে এবং তারপরে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়াস জারি রাখবে। চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমেরিকা নির্ধারণ করতে পারে না। চীনের নেতাকে হোয়াইট হাউসের রাজার দরবারে ডেকে তিরস্কার করা যাবে না এবং মার্কিন মিত্রদের মতো হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা যাবে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাম্প্রতিক উন্নয়ন এবং ২০২৪ সালে বিশ্বের অন্যান্য দেশে চীনা রপ্তানির বৃদ্ধি দেখায় শুল্কের ভয় দেখিয়ে চীনকে থামানো যাবে না। মূলত, যদি ট্রাম্পের প্রাথমিক লক্ষ্য হয় আমেরিকার বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখা, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নতুন প্রশ্ন তুলে দেবে এরপর কী হবে?তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নাকি অন্য কিছু-কেউই এর উত্তর জানে না।
সূত্র: ন্যাশনাল হেরাল্ড
বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৭:১০ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৮ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:৩২ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:০৬ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:২১ অপরাহ্ণ |