আজ বুধবার | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:৫৪
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ‘আলোকবর্তিকা’ হিসেবে একজন আপসহীন নেত্রীর দেখা পেয়েছে এদেশের মানুষ। স্বৈরাচারের পতনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রথম নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার উপর আস্থা রেখেছেন তারা।
শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর উদ্যোগে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শুরুটা হলেও বাধাগ্রস্থ হয় স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে টানা নয় বছরের সংগ্রামের মাধ্যমে কয়েক দফা কারাবরণ করেন আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আশির দশকের শুরুতেই স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করতে না করতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে যখন অন্ধকারের পথে দেশের রাজনীতি, তখন আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে আসেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ঘরকন্না থেকে রাজপথে নেমে আসেন দেশের রাজনীতির এই আপসহীন নেত্রী।
নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। বছরখানেক যেতে না যেতেই নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় প্রশংসা অর্জন করেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদোন্নতি পান। এক মাস পর ১ এপ্রিল তিনি দলের বর্ধিতসভায় প্রথম বক্তৃতা করেন। রাজনীতিতে বেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চারবারের সংসদে পাঁচটি করে আসনে বিজয়ী হন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। আর সেই আপসহীন নেতৃত্বকেই এদেশের জনগণ রায় দিয়েছিলো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনঃগঠনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অবদানে জোর দিয়েছেন। নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কুটির শিল্প গড়ে তোলায় উৎসাহিত করেছেন তিনি। নারীদের ক্ষমতায়নে আলাদা মন্ত্রণালয় জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই আসে। নারীর কল্যাণ ও তাদের অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীনে একটি নারীবিষয়ক দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ১৯৭৮ সালে জিয়া সরকার ‘মহিলাবিষয়ক’ একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে।
নারীরা যাতে যথাযোগ্য মর্যাদা এবং আর্থিক ও সামাজিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা যাতে চাকরি করতে পারেন এবং সর্বোপরি সমাজ ও জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারেন এ বিষয়গুলো দেখভাল করার লক্ষ্যে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে এ মন্ত্রণালয়ে একজন নারীকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৪ সালে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বর্ধিত করে ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে’ রূপান্তরিত করেন। এদেশের নারীদের মূলধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে সাহসী ভূমিকা পালন করেন বেগম খালেদা জিয়া। তার মাধ্যমেই এদেশের মেয়েরা স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়, যা তাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে কোন শ্রেনীকরণে না গিয়ে, সবার মঙ্গলের জন্য কাজ করে গিয়েছেন খালেদা জিয়া। তার উদ্যোগেই নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন করা হয় এবং দ্রুততম সময়ে বিচারের তদন্তের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া ও অপরাধভেদে ৭ বছর কিংবা ১৪ বছর অথবা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিল পাশ হয় সংসদে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মেয়েদের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য জিয়াউর রহমানের গৃহীত পদক্ষেপ পুলিশ বিভাগে মেয়েদের অন্তভুর্ক্তি পুনরায় চালু করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তৃনমূল পর্যায়ের বস্তি এলাকা, দুস্থ নারী এবং গ্রামীণ মেয়েদের ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল গঠনের মাধ্যমে সল্পকালীন ঋণ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের নারী শিক্ষাসহ সর্বোপরি নারীদের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া এবং মিসেস লনের যৌথপ্রয়াসে কার্যযাত্রা শুরু করেছিলো দ্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন। যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে অনন্য পরিচয় এনে দিয়েছে। এবং আজও, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য বাংলাদেশে আসছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ফান্ড গঠনসহ চট্টগ্রামে ১০০ একর জায়গা দানের ব্যাবস্থা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
মহিলা বিজ্ঞানীদের সংগঠন উইস্টারকে সহায়তার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক কর্মকাণ্ড কম্পিউটারের ব্যবহার ও মহিলা সংস্থাকে পূর্ণ সহায়তায় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে অসংখ্য মহিলাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের নারীরা সমানতালে অবদান রাখতে পারেন অর্থনীতিতে। এজন্য তাদের নারী হিসেবে আলাদা পরিচয়ের দরকার নেই। একজন মানুষ হিসেবে মানবিক সমাজ গঠনে নারী পুরুষ সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিতে পারে রাষ্ট্রকে।
বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্ব নারী দিবসে বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও অবদান স্মরণ করা জরুরি, কারণ তিনি শুধু একজন নেত্রীই নন, বরং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকারের জন্য একজন সংগ্রামী পথিকৃত। তাঁর অবদান বাংলাদেশের নারী সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
লেখকঃঅধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান
গনশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি
সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল।
বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৭:১০ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৮ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:৩২ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:০৬ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:২১ অপরাহ্ণ |