আজ বুধবার | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:২৩
শায়রুল কবির খানঃ- স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকদের সংবিধানসম্মত সব অধিকার ভোগ করা যেখানে সর্বত্রই সুনিশ্চিত এবং আমাদের পবিত্র সংবিধানে জনগণের রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার উৎস-মালিকানা প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ়ভাবে ঘোষিত আছে। মৌলিক অধিকার সমুন্নতসহ নানা ধর্মীয়-আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অবাধ-স্বাধীন অংশগ্রহণ ও সার্বিক উপভোগের নিশ্চয়তা সুরক্ষিত থাকলেও বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পদে পদে ভূলুণ্ঠিত করেছে। সরকার সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ কলুষিত চরিত্রে স্বীকৃত ছিল।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের কাছে বহু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন।
চার দিনের সফর শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপিত বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিবেদনে নাগরিক সমাজের গুরুত্ব সীমিত করা হয়েছে।’ তার বক্তব্যে ক্রমবর্ধমান নজরদারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিশোধমূলকভাবে বাকস্বাধীনতা হরণ করার বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে।
বিভিন্ন আইন ও নীতিমালার মাধ্যমে এনজিওগুলোর ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ এবং ব্যাপকভাবে বাকস্বাধীনতা হরণের ফলে তাদের জন্য ফলপ্রসূভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন এবং কখনও কখনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।
বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মী, বিরোধী দল এবং সাংবাদিকদের সংগঠন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ছিল না। নাগরিক ও রাজনৈতিক সমাজের ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য নির্বাচনের সময়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট। এই বিবেচনায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে প্রতিবাদ সমাবেশগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
হিন্দু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে সহিংসতা ও তাদের ভূমি বেদখল থেকে সুরক্ষা প্রদানের ওপর জোর দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অব্যাহত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন পক্ষগুলোর ওই এলাকা পরিদর্শন করার ক্ষেত্রে সরকারকে বাধাহীন অনুমতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনের অভিযোগের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপত্তা খাতের সংস্কারের পাশাপাশি এসব অভিযোগের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের সুপারিশ করে।
অনলাইন স্পেসের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অনলাইনে ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য প্রচারের সুযোগ না রাখাও মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাইবার ক্রাইম অপরাধের নামে হয়রানি করা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনাকারীরা বলেনÑ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা।
সরকার ইচ্ছামতো আইনের প্রয়োগ অথবা অপব্যবহার রোধ করার লক্ষ্যে এ আইনের কতক বিধি রদ ও পুনর্বিবেচনা করা সংক্রান্ত বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপন করেছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাড়া এবং আইনটি পুনর্বিবেচনা করার প্রক্রিয়া গতিশীল করার লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণের প্রত্যাশা করেছিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার কোনো বিষয়ে কর্ণপাত করেনি, বরং ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ ডামি নামে একতরফামূলক প্রহসনের একটি নির্বাচনের আয়োজন করে।
২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যালোচনায় বাংলাদেশের চতুর্থ ইউপিআরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দেশ মৃত্যুদণ্ড বিলোপের সুপারিশ করে, একই সঙ্গে গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও গুমের অভিযোগগুলোর স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানায়।
নির্যাতনবিরোধী সনদ কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের (সিএটি) অতিরিক্ত প্রটোকল স্বাক্ষরের সুপারিশও করে অনেক দেশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে আনা সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিষয়েও আলোচনা হয়।
নতুন এই আইনও মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত করবে বলে অভিমত দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনগুলোর সঙ্গে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সংশোধন করা দরকার।
এর মধ্যে কানাডার প্রতিনিধি সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যালোচনায় ১১৮টি দেশের অংশগ্রহণ করে। পর্যালোচনা সভার পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব পড়েছিল পাকিস্তান, কিউবা ও রুমানিয়ার ওপর।
পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সুপারিশমালা গৃহীত হওয়ার কথা ছিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনে।
এই পর্যালোচনা সভায় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিনিধি। আওয়ামী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা না করেই দমননীতি অব্যাহত রেখেছে।
এই দমননীতির মধ্যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সব সদস্য দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সালে। বাংলাদেশে দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার, হত্যা ও হত্যার পর লাশ গায়েব করা, গুম করাÑ এর সব কিছু হয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে- জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে তা উঠে এসেছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কিছুই ছিল না।
বর্তমানে বাংলাদেশে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আছে। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের ‘১৯ দফা’, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘২০-৩০ ভিশন’-এর আলোকে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘৩১ দফা’র ভিত্তিতে সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র হবে, বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত হবে।
(শায়রুল কবির খান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী)
বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১২:৫৮ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:২৬ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:২০ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:৩৮ অপরাহ্ণ |