আজ সোমবার | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:০১
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা ডাকা হয়। তবে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই সাংবাদিকদের ব্রিফ শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে ব্রিফিংয়ের মাঝেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল করেন। এ সময় সামনের দিকে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ করেন। এরপর অনেকেই একই স্লোগান তোলেন। পরে সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজের কক্ষে চলে যান ওবায়দুল কাদের। অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও যার যার মতো করে চলে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচতলা ও সামনের সড়কে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ অবস্থা ঘণ্টাখানেক চলে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হলে সাবেক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেন, আপনি এখানে কেন এসেছেন? আপনার ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়েছে কেন? ড. আব্দুর রাজ্জাক সভাস্থল ত্যাগ করার সময় তাকে ঘিরে ধরে একই রকম কথা বলতে থাকেন ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতা। এরমধ্যেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন আব্দুর রাজ্জাক। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ।
বেলা ১১টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকেও আগের দিন জানানো হয়। অন্যদিকে ছাত্রনেতারা জানান, তাদেরকেও মতবিনিময় সভার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ছাত্রলীগের কয়েকশ’ সাবেক নেতা দলীয় কার্যালয়ের দোতলার সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত হন। এরমধ্যে সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা ছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা মতবিনিময় না করেই গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। পরে যা হট্টগোলে রূপ নেয়।
কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন কেন? তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন, তারপর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে দিলেন। এর আগে একাধিকবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভা ডেকে ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করে সভা শেষ করে দিয়েছেন। অন্যরা কোনো বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকেও একাই বক্তৃতা করে বৈঠক শেষ করার নজির আছে ওবায়দুল কাদেরের। সর্বশেষ মঙ্গলবার যৌথসভায় একাই বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত সাবেক ছাত্রনেতারা জানান, হট্টগোল শুরু হলে প্রথমে ওবায়দুল কাদেরকে বলতে শোনা যায়, ‘কে, কে, থামো। কিন্তু এরপরও হট্টগোল চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক ছাত্রনেতা জানান, তারা মনে করছেন যে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্ব অবহেলা করছেন। তারা কোনো কাজ করছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কী করে ছাত্রদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিলেন। তিনি কেন বললেন যে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি তিনি কীভাবে করেন? ওই বৈঠকে উপস্থিত আরেকজন ছাত্রনেতা বলেন যে, প্রতিদিন বিতর্কিত মন্তব্য করে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই কেন্দ্রীয় নেতাদের। সারা দেশে যে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এবং অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে উদ্ধারের কোনো পথ নির্দেশ নাই। কেন্দ্রীয় নেতারা সংগঠনের জন্য কোনো কাজ করেন না। টাকা খেয়ে কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে, পদ বাণিজ্য হচ্ছে সে কারণে আজকে আওয়ামী লীগের এই দুর্দশা।
সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ : এদিকে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মতবিনিময় সভায় আসা ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকেও দেখা যায় সেখানে। তাকে শোকজের নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আসাদকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু গতকাল ওবায়দুল কাদেরের গাড়ির সামনেই অবস্থান নিতে দেখা যায় ‘প্রটোকল বাহিনী’র সদস্য হিসেবে পরিচিত আসাদকে।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান: সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ আমাদের লড়তে হবে একসঙ্গে। মান-অভিমান সব ভুলে যেতে হবে। অশুভ শক্তি, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনাই এই মুহূর্তে আমাদের অস্তিত্বের কাণ্ডারি। মন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের প্রতিরোধে মুখে দুষ্কৃতকারীরা পদ্মা সেতুতে আক্রমণ করতে পারেনি। কিন্তু তারা সেতু ভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেলে আক্রমণ চালিয়েছে। এই নারকীয় তাণ্ডবের সঙ্গে আজকে আমাদের লড়াই করতে হবে একসঙ্গে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে এই অপশক্তিকে যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন সেই রকম একজন ভণ্ড মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধা। এই মানুষগুলোকে আমাদের জানতে হবে। এদের ব্যাকগ্রাউন্ড জানলেই এদের উত্তরসূরিদের কর্মকাণ্ডের আসল চেহারা উন্মোচিত হবে- যা এখন উন্মোচিত হয়েছে। সাবেকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে দায়িত্ব ভাগ করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কাউকে বসিয়ে রাখবো না। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গাতে সাবেক ছাত্রনেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হবে। সে কথা আজ জানিয়ে দেয়া হলো। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে- এ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আমরা ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করবো। এটা দলের সভাপতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের বলছি। সংকটে যারা ঝুঁকি নেবেন, তাদের ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের মূল্যায়ন থাকবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আর যারা কোনো কাজ করবে না, শুধু অফিসে এসে প্রটোকল দেবেন- এমন নেতাকর্মীদের আমাদের দরকার নেই। কোনো প্রটোকল দরকার নেই। আমাদের প্রটোকল আমাদের আদর্শ। আমাদের প্রটোকল আমাদের রাজনীতির আদর্শ। কোনো ব্যক্তির আওয়ামী লীগ অফিসের জন্য তার প্রটোকল দেয়ার কোনো দরকার নেই। অনুগ্রহ করে আমি এটা মনে করিয়ে দিচ্ছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।সূত্র:মানবজমিন
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 4:52 AM |
Sunrise | 6:10 AM |
Zuhr | 11:42 AM |
Asr | 2:52 PM |
Magrib | 5:15 PM |
Isha | 6:32 PM |