বিডি দিনকাল ডেস্ক :- বর্তমান নিশিরাতের অবৈধ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নিজেদের অপকর্মে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ভোটারদের ওপর তারা বিশ^াস রাখতে পারছে না। এখন একনায়কতন্ত্র কায়েম করে গায়ের জোরে আজীবন ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখতে শুরু করেছে। তারা উপলব্ধি করছে তাদের পায়ের তলে মাটি নেই। ক্রমশ: গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে তারা। যুগে যুগে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত পতিত স্বৈরশাসকদের প্রেতাত্মা ভর করেছে এই ভোট ডাকাত সরকারের ঘাড়ে। শেখ হাসিনা গায়ের জোরে আজীবন ক্ষমতায় থাকার গভীর দুরভীসন্ধি পূর্ণ করতে চাচ্ছেন। এখন তার দলের নেতারা প্রকাশ্যে তাদের নেত্রীর অভিলাষের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের বৈঠকে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম থাকবেন, ততদিন তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন’। এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন শেখ হাসিনা’। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ’শেখ হাসিনা আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন’।
আমরা মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে তাদের এই বক্তব্য অসাংবিধানিক ও সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। একদলীয় বাকশাল কায়েম যে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, উল্লিখিত বক্তব্যগুলো সেটিরই প্রতিফলন।
এরা বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের বুলি কপ্চায়, আর ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গণতন্ত্রের ঘাড় মটকে দেয়।
মুলত: এই আওয়ামী চক্র সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যেদিন বাদ দিয়েছে সেদিনই সবাই বুঝে গেছে-বাকশাল নতুন কলবরে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটারবিহীনভাবে আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য একদলীয় কর্তৃত্ববাদী বাকশালকেই তারা রাজনৈতিক দর্শণ হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে। তাই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই আজীবন স¤্রাট হওয়ার খায়েশে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু শেখ হাসিনা ব্যর্থ হতে চান না, আমৃত্যু রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখার হীন মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তিনি এখন বাংলাদেশে ‘মাদার অব অটোক্র্যাটে’ পরিণত হয়েছেন। আর সেজন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে নিঃশেষ করার জন্য বন্দী করে রাখা হয়েছে। একটি পাপেট তথাকথিত নির্বাচন কমিশন তৈরী করে তাদের দিয়ে ভোটের নামে রং-তামাশার নির্বাচন হচ্ছে।
সুহৃদ বন্ধুরা,
হানিফ সাহেবরা ভোট রঙ্গ করে শেখ হাসিনাকে কেন আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চান তা খুব ভালো করে জানে দেশের প্রতিটি মানুষ। আওয়ামী লীগ এতো দুর্নীতি করেছে, এতো খুন-গুম-হত্যা-অপকর্ম করেছে যে, তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পাচ্ছে। আতংকে প্রহর কাটছে তাদের। ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এ দেশের মানুষ তাদের বিচার করবে। এই বিচারের ভয়ে কৌশল করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। এছাড়া ক্ষমতা থেকে চলে গেলে লুটপাট-অপকর্মের মচ্ছব বন্ধ হয়ে যাবে। ভাগে-যোগে দেশটাকে লুটেপুটে নিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া, আমেরিকায় সাহেবপল্লী, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, লন্ডন, ইউরোপ, দুবাইতে তাদের অর্থ পাচার বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা জানে শেখ হাসিনা যতদিন থাকবে ততদিন অবাধে লুটপাট করা যাবে। তাই যেকোন উপায়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়। তাদের স্মরণ রাখা উচিত ইতিহাস কখনো তামাদি হয় না। জীবিত অবস্থায় বিচার না হলেও জনগণের অধিকার খর্ব করার জন্য দেশে দেশে স্বৈরাচারের মরণোত্তর বিচার হয়ে আসছে।
সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে সচেতন দেশবাসীর সঙ্গে আপনাদের মাধ্যমে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই। এই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু বলে লাভ নেই, কারণ সরকার নিজেই অন্যায়-অনিয়ম-অরাজকতা ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। আপনারা দেখেছেন, সংবিধানের কথা বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, এমনকি বিচারকরাও রাজপথে নেমে এসেছেন। তারা রীতিমতো ব্যানার হাতে মিছিল শ্লোগান দিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো সভা সমাবেশ করেছেন। বিচারক ও পুলিশ বাহিনী মানববন্ধন করেছে, যা দেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। এধরণের ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত। রাজপথে সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন ভূমিকা দেখে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত, আতংকিত ও ক্ষুব্ধ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার, বিচারকদের অন্যকোন চেতনা থাকতে পারে না, তাঁদের একটি মাত্র চেতনাই থাকা দরকার, সেটি হলো ন্যায়বিচার। নাগরিক সমাজে বিবদমান নানা পক্ষের মানুষ বিবাদ মিমাংসার জন্য আদালত ও প্রশাসনেরই শরনাপন্ন হয়। তারাই যদি কোন এক পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলে অন্য পক্ষের কথা কে শুনবে ? তাহলে ন্যায়বিচার বলে তো কিছু থাকবে না। একদলীয় শাসনে যেমন একদলীয় চেতনাই রাষ্ট্রের সবখানে প্রতিফলিত হয়, সেটিরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল বিচারক ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে চলছে এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর জমিদারী শাসন।
একটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব সংবিধান সমুন্নত রাখা। সরকার যদি মনে করে, দেশে কোনো নাগরিক সংবিধান বিরোধী কাজ করছে তাহলে সংবিধান সমুন্নত রাখতে তাদের আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি না করে তারা কি দাবি নিয়ে রাজপথে নামলেন ? জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন ? কার কাছে দাবি জানালেন ? কাকে হুমকি দিলেন ? কাকে প্রতিপক্ষ বানালেন ?
ক্ষমতা-শক্তি-বন্দুক-আইন-আদালত সব কিছু নিজেদের মতো করে জবর দখলে রেখে সরকার, প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দল সব এখন মিলেমিশে একাকার। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, এমন ক্ষমতা হিটলার ও মুসোলিনিরও ছিল। কিন্তু ইতিহাসে তারা এখন নিষিদ্ধ নাম।
যারা এখন ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিরোধী দল রাজপথে নামার সুযোগ পায়না, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানুষের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ নানা দাবিতে মানববন্ধন করতো অথচ গত কয়েকদিন আগে পুলিশ রাতের আঁধারে শিক্ষক ও শ্রমিকদের লাঠিপেটা ও নির্যাতন করে তাদের উঠিয়ে দিয়েছে, পুলিশ গোটা এলাকা দখলে নিয়েছে। রাজপথে নামতেই দেয়া হচ্ছে না বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও। আর সেই অবস্থায় সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দল, তাদের অঙ্গ সংগঠন, বিচারক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সবাই এখন রাজপথে তাদের পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যস্ত।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
গতকাল ১৪ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক আটটার দিকে শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি দলী প্রার্থী মাহমুদুল হাসান সজলের ওপর হামলা হয়েছে।
শাহজাদপুর পৌরসভার রুপপুর নতুনপাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংযোগ থেকে ফেরার সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী তরু লোদীর নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের একটি সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনী এই হামলা চালায়।
তারা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বিএনপি দলীয় প্রার্থী সজলসহ তিন জনকে গুরুতর আহত করে এবং নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।