আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:৩১
নোবেল দাশ,অভিবাসন কর্মী :- অভিবাসন’ এশব্দটি কারো কাছে স্বপ্ন পূরণ করার। কারো কাছে স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার। আবার কারো কাছে সফলতার। সফল হোক বা অসফল হোক প্রবাস বলতেই প্রচুর কষ্টের ও ত্যাগের। একজন প্রবাসী কত শত স্বপ্নজাল বুনে নিজের মা-বাবা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তানাদি পরিবার-পরিজন ছেড়ে শত বা হাজার হাজার মাইল দূরে পাড়ি জমায় স্বপ্ন পূরণের জন্য। স্বপ্ন পূরণের জন্য কখনো তারা বেছে নেয় সঠিক পথ। আবার কখনো তারা পা বাড়ায় দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে হয়ে যায় সর্বস্বান্ত। সফল হোক বা অসফল প্রত্যেক প্রবাসীর জীবনেই রয়েছে মর্মান্তিক জীবনযুদ্ধের গল্প।
আজ আমরা তেমনই এক প্রবাসী ভাইয়ের জীবনের গল্প বলবো:
মোঃ জালাল উদ্দিন, থাকেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের গুন্দ্বীপ পাড়া নামক গ্রামে। পরিবারের ৩ ভাইয়ের মধ্যে জালাল উদ্দিন সবার ছোট। বাবাও মা’কে হারান অনেক ছোট বেলায়। বড় ভাইদের হাতেই বেড়ে উঠা জালালের। বড় ভাইয়েরা ও চাকরি করেন মুরগি বিক্রির ফার্মে ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। ভাইদের স্বল্প আয় হওয়ার কারণে সংসারে থাকত রোজ টানাপোড়েন। তারপরে ও জালাল ভাই কোনোমতে সম্পন্ন করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর এখানে ওখানে দোকানের চাকরি করে চালাতেন কোনোরকমে নিজের খরচ। অল্প কিছু টাকা সঞ্চয় করে শহরের একটি মুরগির দোকান দেন। অল্প সল্প আয় হতো। এভাবেই চলতে থাকে। আর এরই মধ্যে জালাল ভাইয়ের মনে সহজে স্বপ্ন পূরণের লোভ দেখিয়ে বিদেশ গমনের ধারণা মাথায় ঢুকিয়ে দেয় এক দালাল তথা এক এজেন্সি। আর সেই ফাঁদে পা ও দিয়ে দেন জালাল ভাই। নিজের বড় ভাইদের ও জানিয়ে দেয় তার অভিবাসনের কথা। ভাইদেরকে বলে, নিজে বিদেশ গেলে টাকা কামানো শুরু করলে আর কোনেরকম সমস্যা থাকবে না, থাকবে না কোনো অভাব ও। এই আশায় বড় ভাইরা ও তার সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে যায়। জালাল ভাই তার মুরগির দোকান বিক্রয় করে দেন বিদেশ যাওয়ার আশায়। সেই টাকার সাথে জালাল ভাইয়ের জমানো হাজার পঞ্চাশেক টাকা তার সাথে যোগ করে তার বড় ভাইয়ের শশুর বাড়ি থেকে কিছু, প্রতিবেশি ও বন্ধু-বান্ধব থেকে কিছু ধার-দেনা করে ৬ লক্ষ টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। জালাল ভাইকে বলা হলো সুপারশপে সেলসম্যানের চাকরির ভিসা দিবে। জালাল ভাই ও খুশিতে পাড়ি জমায় সূদুর সৌদি আরবে। কিন্তু জালাল ভাই তো আর জানত না যে সৌদি আরবে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন যে তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সাথে বিন্দুমাত্র ও মিল নেই। সুপারশপে তো দূরের কথা কোথা ও কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারেন নি। অনেক বেশি কষ্টে পড়ে যান। বলা হয় যে, মানুষের কষ্টের কথা কারো সাথে শেয়ার করলে নাকি কষ্ট কমে যায়। কিন্তু এ বেচারা উনার কষ্টের কথা পরিবারে বলতেই পারে নি, সাহস ও হয় নি উনার। কারণ কোন মুখে বলবেন? কত কষ্ট করেই না বিদেশ যাওয়ার টাকার ব্যবস্থা করেছেন। এরপর নিজে নিজে ভাবে যে যা পাই তা ই করবে। কখনো রং মিস্ত্রির হেল্পার হয়েছেন, কখনো বোঝা মাথায় নিয়েছেন, কখনো নির্মাণ কাজে খুব সামান্য টাকার হেল্পার। কিছুদিন পর সেখানে কোনো এক দূরের পরিচিতের মাধ্যমে একটি হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ নেন। এভাবে এটা সেটা করে কোনোরকমে ১৫-২০ হাজার ইনকাম করতেন। নিজের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা পরিবারে পাঠাতেন। কিন্তু যে আশায় উনি বুক বেঁধেছিলেন সে আশা প্রতারণা ও বাস্তবতার শিলায় চাপা পড়ে যায়। কারণ যে টাকা উনি দেশে পাঠাত সে টাকা তো উনার ঋণ পরিশোধের জন্য ও পর্যাপ্ত ছিলো না, পারিবারিক খরচ তো দূরের কথা। এমনকি উনি দেশে ফেরার পর এখনো উনার ১.২০ লাখ টাকা ঋণ রয়ে গেছে। জালাল ভাই কোন উপায়ন্তর না পেয়ে দেশে ফেরেন। ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে করোনার কারণে আটকে যান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই তার ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয় ঐ দেশ থেকেই। আর এমনিতে ও তিনি আর প্রবাসে যেতে চান না। কারণ এত্ত হাড়ভাঙা খাটুনি তার আর সহ্যনা। প্রতিশ্রুত কাজ তো পান নি আবার যা করেন তার বেতন ও পান খুব সামান্য। জালাল বিদেশে কাজ করে ও উনি পূর্বের চেয়ে খারাপ অবস্হানে। বরং পূর্বের তুলনায় উনার ঋণ বেড়ে গেছে। পূর্বে উনার নিজের একটা দোকান হলে ও ছিলো কিন্তু আজকে উনার নিজের বলতে কিছু নেই শুধু উনার ঋণ ছাড়া। বর্তমানে উনার নিজের টাকায় একবেলা খাওয়ার সামর্থ্য ও নেই। বড় ভাইয়ের সাথে থেকে কোনোরকমে উনাদের সাথে তিনবেলা আহার করেন।
জালাল ভাই খুব চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত। জালাল এভাবে নিজের বোঝা বড় ভাইদের উপর আর চাপাতে চান না। কারণ উনাদের ও তেমন কোনে সামর্থ্য নেই। জালাল ভাই নিজে কিছু করতে চাই। উনি পূর্বের মতো দোকান দিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে চাই। কিন্তু কোনো সঞ্চয় না থাকায় আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। জালাল নিজেকে আর সমাজ তথা দেশের বোঝা হিসেবে দেখতে চান না। জালাল আবার স্বপ্ন দেখা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |