আজ শুক্রবার | ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১:৩৭

শিরোনাম :

প্রশাসনে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাচ্ছেন:ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সিলেটের জাফলং সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জাহাজের মাস্টারের ওপর ক্ষোভ থেকে তাকে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত আকাশ:র‌্যাব-১১ শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি,এই সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হলো আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করবো:উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ(ভিডিও) সরকার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বলে অভিযোগ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাঁদপুরের মেঘনায় মাঝির বাজার এলাকায় জাহাজে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড

 যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য চক্রান্তের ফাঁদে

প্রকাশ: ৫ মার্চ, ২০২১ ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ সম্ভাবনাময় বাজার চলে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের দখলে । দু-তিন বছর আগেও বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের বিস্তৃত বাজার ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিডি ফুডসহ আরো কয়েকটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্য খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সে অবস্থা দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ভিনদেশি নয়, খোদ স্বদেশিদের পাতানো ফাঁদে পড়ে এসব পণ্য এখন বাজার হারাতে বসেছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদার পরও মিলছে না কাক্সিক্ষত পণ্য। বরং মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কতিপয় পণ্য আমদানিকারক নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের বিস্তৃত বাজার রয়েছে নিউইয়র্কে। কারণ এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস। শুধু দেশপ্রেমের টানেই নয়, পণ্যের গুণগত মান ও স্বাদের কারণেও বাংলাদেশিরা স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিডি ফুডের মতো পণ্যকে বেছে নেন। কিন্তু এখন এসব পণ্যের বাজার দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গ্রোসারির র‌্যাক বা শেলফ দখলে নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের পণ্য। মুনাফা বেশি হওয়ার কারণে অধিকাংশ গ্রোসারির শেলফে কদর বাড়ছে ওই দুই দেশের পণ্যের। অথচ গুণগত মান ও স্বাদের দিক থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ধারেকাছেও নেই ভারত ও পাকিস্তানের অনেক পণ্য।

বাংলাদেশি পণ্যের কদর কমেনি, বরং বেড়েছে। বাংলাদেশি গ্রোসারি মালিকদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই, তার পরও কেন বিস্তৃত হওয়ার পরিবর্তে সংকুচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার? এ ব্যাপারে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের কমপক্ষে ১৫টি কোম্পানির বিপুল খাদ্যপণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিডি ফুড, বোম্বে সুইটস, কাজী ফার্ম, তীর, বনফুল, অলিম্পিক, অলিম্পিয়া, প্রিন্স বেকারি, ওয়েল ফুড, নোভা, কুলিয়ারচর, নিকোবিনা, ইবকো ও মুঘল উল্লেখযোগ্য। এসব কোম্পানির সহস্রাধিক পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়াসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিস্তার লাভ করেছে। কিন্তু অতিলোভী স্বদেশি একটি কুচক্রী মহল সুকৌশলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার নষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা আমদানি করছেন, অভিযোগের তির তাদের কারো কারো বিরুদ্ধেই।

তবে ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে আমদানিকারকদেরও। তাদের মতে, শুধু দেশপ্রেম দেখালে হবে না, পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের অনেক উৎপাদক সেটি মানছে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমদানিকারক ঠিকানাকে জানান, বাংলাদেশি যত পণ্য বাজারে রয়েছে, এর মধ্যে স্বনামধন্য একটি কোম্পানির পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু ওই কোম্পানির পণ্য আমদানিকারক এখন নিজেই একটি কোম্পানি খুলে বসেছেন। একই পণ্য তারা ভিন্ন নামে বাজারে নিয়ে এসেছেন। নিজেদের পণ্য ‘পুশ’ সেল করছেন এবং কৌশলে আমদানি করা জনপ্রিয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন।

এর চেয়েও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় কয়েকজন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে। অন্য কোনো আমদানিকারক বাংলাদেশের জনপ্রিয় কোম্পানির পণ্যগুলো বৈধভাবে আমদানি করে বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ জারি করছেন! ফলে আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশি একই ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাত করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশি একজন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে, যিনি নিউইয়র্কের মেসপ্যাথের একটি ওয়্যারহাউসে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্যের প্যাকেট বদলে নিজের কোম্পানির নামে নতুন মেয়াদে বাজারজাত করছেন। ৮ বছর আগে এস্টোরিয়ার একজন আমদানিকারক বাংলাদেশের স্বনামধন্য আরেকটি কোম্পানির পণ্যের বাজার একইভাবে ধ্বংস করেছেন। ওই আমদানিকারক পরে নিউইয়র্ক থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেন।

ওই আমদানিকারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বাংলাদেশি একটি কোম্পানির পণ্যের একমাত্র আমদানিকারক ছিলেন। বাংলাদেশি পণ্যের প্যাকেট নকল করে খাওয়ার অযোগ্য পণ্য বাজারজাত করেছেন এবং এফডিএর কাছে অভিযোগ করে ওইসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিষিদ্ধ করিয়েছেন। নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ এবং পাকিস্তানি একটি কোম্পানির পণ্য বাজারজাতকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্তমানে ওই আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র থেকেই পুরো ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনপ্রিয় কোম্পানিটির চরম ক্ষতি করে গেছেন। এখনো যার ক্ষত বয়ে চলেছে বাংলাদেশের খ্যাতনামা কোম্পানিটি।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে বড় দুটি গ্রোসারি ভারতীয় মালিকানাধীন। ৩৭ অ্যাভিনিউর গ্রোসারির ৯০ শতাংশ ক্রেতা বাংলাদেশি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই গ্রোসারিতে একসময় ৫০ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য রাখা হতো। কিন্তু এখন সেখানে ২ শতাংশও বাংলাদেশি পণ্য নেই। পুরো গ্রোসারির শেলফে রাখা অধিকাংশ পণ্য ভারত ও পাকিস্তানের। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোববার ওই গ্রোসারি ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেসব শেলফে বাংলাদেশি স্কয়ার, প্রাণ, বিডি ফুডের একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল, সেখানে এখন শুধুই ভারতীয় পণ্য। প্রাণ-আরএফএলের পণ্য নেই বললেই চলে। শেলফের এক কোণে প্রাণের সরিষার তেল ও আচারের দেখা মিলেছে। অথচ এই কোম্পানির কয়েক হাজার পণ্য বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। একজন আমদানিকারকের পণ্য শেলফে সাজানো রয়েছে। প্যাকেটের গায়ে বাংলাদেশি পণ্য লেখা থাকলেও সেটি মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য, নতুন নামে বাজারে ছাড়া। এফডিএর অনুমোদন আছে কি নাÑসে ব্যাপারেও কোনো ঘোষণা নেই প্যাকেটের গায়ে।

জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রিটে আরেকটি বড়সড় গ্রোসারি রয়েছে ভারতীয় মালিকানাধীন। সেখানকার ৫০ ভাগ ক্রেতাই বাংলাদেশি। অথচ রোববার সেখানে গিয়েও দেখা গেল পুরো গ্রোসারিতে বাংলাদেশি পণ্যের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের মধ্যে পাওয়া গেল ইস্পাহানি ও তাজা ব্র্যান্ডের চা, তিব্বত স্নো, কিয়াম ব্র্যান্ডের ক্রোকারিজ, স্কয়ারের রাঁধুনী মশলা ও সরিষার তেল, রুচি চানাচুর, বোম্বে সুইটসের চানাচুর। ক্রেতাসমাগম কম, এমন স্থানে একটি ছোট শেলফে রাখা আছে রাঁধুনীর অল্প কিছু মশলা। অথচ চারদিকে ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যে ঠাসা পুরো গ্রোসারি!

বাংলাদেশি পণ্য কম কেন- জানতে চাইলে গ্রোসারির ইনভেনটরিতে কর্মরত কর্মীরা জানান, বাংলাদেশি পণ্যের জোগান নেই। তা ছাড়া ক্রেতারাও এখানে বাজার করতে এসে বাংলাদেশি পণ্য খোঁজেন না। তবে সেখানকার বাংলাদেশি ক্রেতারা জানালেন ভিন্ন কথা। বাংলাদেশি ক্রেতা সিতারা বেগম জানান, আগে বাংলাদেশি সব ধরনের মশলা এখানে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তারা রাখে না বলে তা বাংলাদেশি গ্রোসারি থেকেই সংগ্রহ করেন।

এদিকে বাংলাদেশি অধিকাংশ গ্রোসারির মালিক এখনো তাদের গ্রোসারিতে স্বদেশি পণ্য বিক্রিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তার পরও কৃত্রিম সংকটের কারণে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না। ক্রেতা ধরে রাখতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই বিকল্প পণ্য বিক্রি করছেন তারা। এতে করে ক্রেতা অনেক সময় বিকল্প ব্র্যান্ডে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। এটা একটা খারাপ দিক।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন বহু গ্রোসারি রয়েছে। এসব গ্রোসারিতে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নিউইয়র্কের কুইন্সের বেলরোজে রয়েছে ভারতীয় মালিকানাধীন বেশ কিছু গ্রোসারি। বাংলাদেশি মালিকানাধীন জনপ্রিয় প্রিমিয়াম সুপার মার্কেটের একটি বড় শাখা রয়েছে সেখানে। এখানকার ৫০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশি। কেনাকাটার সুন্দর পরিবেশ রয়েছে বলেই লং আইল্যান্ডসহ আশপাশের এলাকার বাংলাদেশিরা প্রিমিয়ামে যান।

প্রিমিয়াম সুপার মার্কেটের কর্ণধার বাবু খান ঠিকানাকে জানান, বাংলাদেশি পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল মেইনটেন করা হয় না। ছয় মাস আগেও বাংলাদেশি একটি স্বনামধন্য কোম্পানির পণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্য পেয়েছে এফডিএ। এ কারণে এফডিএ ওই পণ্যটির বাজারে ঢোকা স্থগিত করে দেয়। এ কারণে বাজার অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি। বাবু খান বলেন, নেতিবাচক এসব কারণে বাংলাদেশিরাও নিজ দেশের পণ্যের প্রতি বিমুখ হন। নিশ্চয় তারা চাইবেন না যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্য কিনতে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অধিক সতর্ক হতে হবে।

বাবু খান আরো জানান, বাংলাদেশের অনেক পণ্য এ দেশে বৈধভাবে আমদানি হয়। এফডিএর শর্ত মেনেই এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আসে। আবার একই পণ্য তৃতীয় মাধ্যমে, বলতে গেলে রাস্তা থেকে কিনে নিয়ে আসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। পরে সেগুলো যখন এফডিএ পরীক্ষা করে, তখন খারাপ কিছু পাওয়া যায়।

জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের খামার বাড়ির অন্যতম কর্ণধার কামরুজ্জামান কামরুল ঠিকানাকে জানান, খামার বাড়ি শতভাগ বাংলাদেশি গ্রোসারি। আমরা চেষ্টা করি আমাদের গ্রোসারিতে শতভাগ বাংলাদেশি পণ্য রাখার। দু-একটি ভারতীয় পণ্য থাকলেও তা শুধু ক্রেতাদের চাহিদা সাপেক্ষে রাখা হয়।

তিনি জানান, বাংলাদেশি যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ কর্তৃক পরীক্ষিত। কিন্তু তার পরও অনেক বাংলাদেশি ভারতীয় পণ্যের ওপর ঝুঁকছেন। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশি পণ্যের সরবরাহ কম।

তিতাস সুপার মার্কেটের কর্ণধার আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম ঠিকানাকে জানান, বাংলাদেশি পণ্য বিক্রিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। ক্রেতাদের আন্তরিকতায়ও কোনো ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, তিতাস সুপার মার্কেটের ৮০ ভাগ পণ্যই বাংলাদেশি। গুণগত মানের কারণে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বাংলাদেশি পণ্য পছন্দ করেন।

জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের হাটবাজার গ্রোসারিও বাংলাদেশি পণ্য বিক্রিতে অগ্রাধিকার দেয়। তবে একই স্ট্রিটের বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি গ্রোসারিতে বাংলাদেশি পণ্যের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানি পণ্য বেশি দেখা গেল। বাংলাদেশের মশলার শেলফটি এমন স্থানে রাখা, যেখান থেকে হাত বাড়িয়ে নেওয়া একজন ক্রেতার জন্য দুরূহ ব্যাপার।

জ্যাকসন হাইটসের ৩৫ অ্যাভিনিউর বাংলাদেশি মালিকানাধীন গ্রোসারি ‘মাছবাজার’-এর ৯০ ভাগ পণ্যই বাংলাদেশি। তারা দেশীয় পণ্য বিক্রিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্রঙ্কসের জনপ্রিয় গ্রোসারি ‘বাংলা টাউন’-এ বাংলাদেশি পণ্য বলতে গেলে শতভাগ। ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউতে রয়েছে বাংলা নগর, গ্রিনহাউজ, সূচনা, প্রগতিসহ বাংলাদেশি মালিকানাধীন ১০-১২টি গ্রোসারি। এসব গ্রোসারির মালিকেরা শতভাগ বাংলাদেশি পণ্য বিক্রির ব্যাপারে আগ্রহী। অন্য কমিউনিটির চাহিদার জন্য কিছু পণ্য বাইরের দেশের রাখতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশি কিছু পণ্যের সরবরাহ কমে গেলে বিকল্প হিসেবে অন্য দেশের পণ্য রাখা হয়।

বাংলাদেশি পণ্যের বাজার ধরে রাখা এবং আরো বিস্তৃত করার ব্যাপারে একাধিক ব্যবসায়ী মনে করেন, এ বিষয়ে প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের স্বদেশি পণ্য কিনতে হবে। জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও খামার বাড়ি গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার কামরুজ্জামান কামরুল জানান, কোনো ভারতীয় বা পাকিস্তানি অভিবাসী বাংলাদেশি গ্রোসারিতে সাধারণত বাজার করতে যান না। অথচ জ্যাকসন হাইটসে ভারতীয় মালিকানাধীন বড় দুটি গ্রোসারির ৯০ ভাগ ক্রেতাই বাংলাদেশি!

জ্যামাইকার ফাতেমা গ্রোসারির কর্ণধার ও মূলধারার রাজনীতিক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার মনে করেন, বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেক আমদানিকারক বাংলাদেশি পণ্য আমদানিও করতে চান। কিন্তু এফডিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠিন শর্তাবলি রয়েছে। সেগুলো পূরণ করতে গিয়ে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের একচেটিয়া বাজার তৈরি করতে হলে গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশি অনেক কোম্পানি পরবর্তীতে মান ধরে রাখতে পারে না। অনেক সময় বাংলাদেশি পণ্যের নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। এসবের দীর্ঘ একটা প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি নাÑজানতে চাইলে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে দূতাবাসের একটি শক্তিশালী ইকোনমিক উইং রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, সম্ভাবনা এবং সমস্যার সমাধানে কাজ করে। সদ্য যোগ দেওয়া রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে তিনি আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর সেলিম রেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঠিকানাকে জানান, গত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ ভাগই অর্জিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তবে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি গত অর্থবছরের চেয়ে শতকরা ৫৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের আরো সুযোগ রয়েছে। দূতাবাস এ ব্যাপারে কাজও করছে। তবে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশি কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ইকোনমিক কাউন্সেলর। তিনি বলেন, অনেক সময় বাজার থেকে নন-ব্র্যান্ড পণ্য সংগ্রহ করে থাকে এফডিএ। সেগুলো বাংলাদেশি পণ্য হিসেবেও দেখানো হয়। অথচ সেগুলো বাংলাদেশি নয়। এসব বিষয় নিয়ে আমরা এফডিএর সঙ্গে কাজ করি। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকেও অনেকে মশলা ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সঙ্গে নিয়ে আসেন। বিমানবন্দরে সেগুলো অনেক সময় আটকে দেওয়া হয়। পরে সেগুলো এগ্রিকালচার বিভাগ পরীক্ষা করে থাকে। ওই পরীক্ষায় একবার বিষাক্ত লিড বা সিসা ধরা পড়েছিল। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পুরো পণ্যের ওপর। এ ব্যাপারে তিনি সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
fb-share-icon20

অর্থনীতি প্রবাসের সংবাদ

আরও পড়ুন

গত ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ

  • আর্কাইভ

    প্রশাসনে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো

    অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে অভিনব প্রতারণা; চাইনিজ নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরখান থানা পুলিশ

    জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যাচ্ছেন:ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন

    সিলেটের জাফলং সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

    রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবার মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর

    জাহাজের মাস্টারের ওপর ক্ষোভ থেকে তাকে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত আকাশ:র‌্যাব-১১

    শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি,এই সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হলো আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করবো:উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া

    প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘ঘাপটি মেরে থাকা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান এজেডএম জাহিদ হোসেন’র

    ময়মনসিংহে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টূর্নামেন্টের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত

    রাণীশংকৈলে খ্রিস্টান ধর্মলম্বীদের ৪০টি গির্জায় বড়দিন পালিত

    কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ১২ কেজি গাঁজা সহ ১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

    সিডনিতে সর্বপ্রথম আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের উদোগে বিজয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

    ফখরুলের সঙ্গে খেলাফত মজলিস নেতাদের সাক্ষাৎ

    ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন ছিল :কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে আমিনুল হক

    শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক

    নড়াইলে নতুন ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস প্রথম যাত্রীরা টিকিট পেয়ে ভীষণ খুশি

    হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে: মীর সপু

    দূর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে: মেজর হাফিজ(ভিডিও)

    সরকার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বলে অভিযোগ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর

    ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

    কুড়িগ্রামে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

    বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু : ২য় দিনের মতো বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

    সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

    সাদপন্থীদের হামলায় নিরীহ তাবলীগের সাথীদের হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান

    শরীয়তপুরে সাবেক ওসি-এসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা

    বিএনপি’র কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আংশিক আহবায়ক কমিটি গঠিত

    “পতিত” আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভূলে যাবার সুযোগ নেই :উত্তরায় আমিনুল হক(ভিডিও সহ)

    চাঁদপুরের মেঘনায় মাঝির বাজার এলাকায় জাহাজে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড

    নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনে প্রশাসন আর কারও পক্ষে ব্যবহার হতে চায় না।

    অবশেষে পলাতক হাসিনারে ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের কর্মকর্তারা

    • Dhaka, Bangladesh
      শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
      SalatTime
      Fajr5:18 AM
      Sunrise6:39 AM
      Zuhr12:00 PM
      Asr3:00 PM
      Magrib5:20 PM
      Isha6:41 PM
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুল হাসান বাবলু
    ই-মেইলঃ dk.kamrul@gmail.com
    copyright @ বাংলাদেশ দিনকাল / বিডি দিনকাল ( www.bddinkal.com )
    বিডি দিনকাল মাল্টি মিডিয়া (প্রা:) লিমিটেড প্রতিষ্ঠান।