আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:০৮
আপনার দরবার সবসময় উন্মুক্ত ছিলো। রাতে-দিনে খোলা ছিলো মুঠোফোন। জবির কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী যে কোনো অসুবিধায় আপনাকে ফোন করেছে কিন্তু আপনাকে পায়নি, এমন দৃষ্টান্ত সম্ভবত একটিও নেই। এমন দৃষ্টান্তও নেই একটি যে, কারো অসুবিধার কথা আপনি জেনেছেন আর আপনার সাধ্যের মধ্যে তা সমাধানের চেষ্টা করেননি! একজন সাধারণ শিক্ষার্থী বা কর্মচারী-কর্মকর্তা কিংবা অতি সাধারণ কোনো শিক্ষক উপাচার্য মহোদয়ের সাথে সরাসরি নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে এবং সমস্যার সমাধানও পেতে পারে – আপনাকে না পেলে হয়তো কখনো জানাই হতো না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের যা যা প্রয়োজন, প্রাপ্য ছিলো, সেগুলোতো আপনি স্বেচ্ছায়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই করতেন। আমাদের চাওয়ার ভাষা, আবেদনের শব্দ ঠিক না হলে আপনি সেটাও ঠিক করে দিতেন, যেনো পরবর্তীতে প্রশাসনিক কোনো জটিলতায় না পরি। আর বাইরের সমস্যায় আপনিই ছিলেন আমাদের প্রথম ভরসা।
স্বামী বা স্ত্রীর প্রমোশন, পদায়ন, ট্রান্সফর, ভাই-বোন-বন্ধুর চাকরি, জমির সমস্যা, ফ্লাটের সমস্যা এমনকি মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার পর প্রতারণার শিকার হওয়ার সমস্যা পর্যন্ত আপনাকে সমাধান করতে দেখেছি। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়ে দেখেছি, এ জাতীয় সমাধানের ক্ষেত্রে আপনি পক্ষ-বিপক্ষ যাচাই করেননি। আপনি নিশ্চিতভাবেও যখন জানতেন যে, যার জন্য করছেন সে আপনার প্রবল বিরোধিতা করে, আড়ালে অকারণ কুৎসা রটনা করে – তারপরও আপনি নিরস্ত হননি। সাধ্য থাকা অবস্থায় চেষ্টা বাদ দেননি।
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস অনুমোদনের আগে কেরানীগঞ্জে যে জমি কেনা হয়েছিল, সেখানে কারা যেনো ইটের ভাটা তৈরি করেছিল। যারা করেছিল তারা প্রবল ক্ষমতা নিয়েই করেছিল। অন্য কেউ হলে দেন-দরবার হতো, মামলা হতো। শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে হতো। সড়ক অবরোধ ভাঙচুর করা হতো। তারপর হয়তো কোর্ট থেকে রায় নিয়ে জমিতে যেতে হতো। বাংলাদেশে রায়ের যে ধীরগতি, সেটা কবে হতো, আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু আপনি এর কিছুই করেননি। ভীষণ ক্ষমতাবান হিসেবে খ্যাত স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি যাবেন, সে যেনো থাকে। তারপর নিজে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে একদিনের মধ্যে ইটের ভাটা অপসারণ করেছেন। আপনি চলে গেছেন, এখন তো বলাই যায়, আপনি না থাকলে জবির বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পদের খাতায় এটির নামও উঠে যেতো।
উপাচার্য তো অনেকেই হয়। দায়িত্ব তো অনেকেই পালন করেন। কিন্তু নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে প্রতিষ্ঠানকে এবং প্রতিষ্ঠানের সবকিছুকে ধারণ করে সবকিছুকে উচ্চতম আসনে অধিষ্ঠিত করার এমন সাফল্য আর তো দেখা যায় না।
আপনার উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বাংলাদেশের অসংখ্য উপাচার্য নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন বাণিজ্য, আর্থিক কেলেংকারি এমনকি কেউ কেউ নারী কেলেঙ্কারির কলঙ্ক নিয়ে নিরবে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে এসেছে। অনেকের এ ভাগ্যও হয়নি। তাদেরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে পুলিশি প্রহরায়। দীর্ঘ আট বছর আপনি জবির দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, যেমন মাথা উঁচু করে এসেছিলেন, গিয়েছেন তারচেয়েও বেশি উঁচু মাথা নিয়ে। আপনার চলে যাওয়ার পথ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অবিনাশী অশ্রুজলে সিক্ত হয়েছে। ছেয়ে গেছে প্রকাশ্য ও গোপন নিবেদনের পুস্প-পল্লবে।
এখন তো বলাই যায়, প্রশাসক হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেই আপনি ছিলেন আমাদের ভালোবাসার মানুষ। পদের ভারে বা সুবিধার আকাঙ্ক্ষায় নয়, আপনাকে ভালোবাসি আপনার হৃদয়গত ঔদার্য ও ঐশ্বর্যের জন্য।
আপনি শতায়ু হোন। সম্মান, সুস্থ্যতা ও দীর্ঘ নেক হায়াত আপনার হোক। আপনি সবসময় ভালো থাকুন বাহিরে অন্তরে।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া )
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |