আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৫২
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান:- বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হওয়ার পথে এই পুণ্যবান নারী আজীবন পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবের বন্ধু, পরামর্শক, সমর্থক এবং সহায়ক। বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এমন বিরল ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালী জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তিনি অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দী থাকার সময়ে কিংবা জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকি দলের নেতা না হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তখন তিনি সাহসী ও বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রাজনীতিতে স্মরণীয় সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব হতো, যদি বেগম মুজিব তাঁর সঙ্গে না থাকতেন। বেগম মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সে পৌঁছার আগেই তিনি তাঁর পিতা-মাতাকে হারান এবং তাঁর দাদার ভাইয়ের সংসারে ভবিষ্যত শাশুড়ির কাছে পালিত হন। শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার বয়স যখন দশ বছর তখন তার বিয়ে হয়। আমার মায়ের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর (শেখ মুজিব আমার পিতা, পৃঃ ২৭)। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘…যদিও আমাদের বিবাহ হয়েছিল ছোট বেলায়। ১৯৪২ সালে আমাদের ফুলশয্যা হয়।’ (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃঃ ২১)। ৩৩ বছর বিবাহিত জীবনে প্রায় ১৩ বছর বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। মুক্ত দাম্পত্য জীবন মাত্র ২০ বছরের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের সেই বন্ধন অটুট ছিল।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার সঙ্গে উইনি ম্যান্ডেলার (১৯৩৬-২০১৮) রাজনৈতিক কর্মধারার তুলনা করলে কয়েকটি বিষয়ে মিল পরিলক্ষিত হবে। উভয়ই ছিলেন বিশ্বের কিংবদন্তি দুই রাজনৈতিক নেতার যোগ্য জীবনসঙ্গী। উইনি ম্যান্ডেলা ছিলেন সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ, ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ তাঁকে ‘জাতির মাতা’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তৎকালীন শে^তাঙ্গ শাসকদের বর্ণবিদ্বেষী আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, জেল খাটা, একের পর এক প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার সময় নেলসন ম্যান্ডেলার পাশে ছিলেন উইনি। নেলসন ম্যান্ডেলার দাম্পত্য জীবনের (১৯৫৭-১৯৯৬) ১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল দুর্ভোগ ও দুর্দশাময়। বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের কারণে ১৯৬২ সালে নাশকতার অভিযোগ তুলে নেলসন ম্যান্ডেলাকে পুরে দেয়া হয় কারাগারে, একটানা ২৭ বছরের কারাবাস ছিল যন্ত্রণার। অর্থাৎ নেলসন ম্যান্ডেলাকে বিয়ের পর ৩৮ বছর ব্যাপী বিবাহিত জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তাঁদের আলাদা থাকতে হয়েছে। দুঃসময়ে উইনি একাই তাঁদের দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন। অন্যদিকে সরকারের অত্যাচার ও দমন-পীড়নের মধ্যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগার থেকে বের হন। স্বামী কারাবন্দী থাকার সময় স্পষ্টবাদী উইনি কঠোর পরিশ্রম করে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘সব ধরনের পরিস্থিতিতেই আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।’ বেগম মুজিব নিজের আত্মজীবনী লিখে যাননি। লিখলে সেটা হতো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনন্য দলিল। তবে জাতির জনকের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস, তা পেয়েছি কিন্তু বেগম মুজিবের কারণেই। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘… আমার সহধর্মিণী এক দিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবন কাহিনী।’ … আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু, আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছিল। রেণু আরও একদিন জেল গেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।’
যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার পর নেলসন ম্যান্ডেলার মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্ত্রী উইনিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সরকারী বাহিনী উইনির ওপর নির্যাতন চালাত। তাঁকে আটক রাখত কিংবা নির্বাসনে পাঠানো হতো। স্বামীর সঙ্গে কদাচিৎ সাক্ষাতের সুযোগ পেতেন তিনি। মুষড়ে না পড়ে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে উইনি সবসময়ই সামনে থেকে লড়াই করে গেছেন। ১৯৭৬ সালে সোয়েতো অভ্যুত্থানের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হন। এমনকি আশির দশকের শেষে শ্বেতাঙ্গ সরকার বিরোধী সহিংস আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। উইনি সম্পর্কে ডেসমন্ড টুটু তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘তিনি আমাদের সংগ্রামের এক অসাধারণ সাহস এবং মুক্তিযুদ্ধের মূর্তি।’
উইনি ম্যান্ডেলা যেমন নেলসনের সাহচর্যে এসে জনগণের দাবিকে নিজের করে নিয়েছিলেন ভালবেসে, তেমনি জাতির প্রতি বেগম মুজিবের ব্যক্তিগত অবদান এবং তাঁর বঙ্গমাতা হয়ে ওঠা বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি ভালবাসার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। জাতির প্রতি তাঁর জীবন উৎসর্গ এত গৌরবময় ছিল যে, ‘বঙ্গমাতা’ তাঁর জন্য উপযুক্ত উপাধি। সরল-সাধারণ জীবনযাপন, ধৈর্য, রাজনীতির প্রতি কৌতূহল আর সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি-তা কেবল একজন গৃহিণী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। বরং জাতির জন্য তাঁর ত্যাগের বিষয়টি বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবের জীবনসঙ্গী হিসেবে ছিল তাৎপর্যময়। তিনি আদর্শ মাতা ছিলেন এবং একজন রাজনৈতিক নেতার পাশে ছিলেন সকল সঙ্কট মোকাবেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর লাখ লাখ সমর্থকের ‘ভাবী’ হয়ে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে ৩০৫৩ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। এই কারণে প্রতিদিনের রাজনৈতিক কর্মধারা পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধে পড়েছিল এবং তিনি একজন যোগ্য কর্মী হিসেবে সবচেয়ে সফলতার সাথে সেই কাজটি করেছিলেন। তিনি কখনও মিছিল করার জন্য বাসা থেকে বের হননি বা প্রকাশ্য স্থানে নিজেকে জনতার সামনে তুলে ধরেননি। বরং তিনি তাঁর দেশের নিপীড়িত জনতার একজন হয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার একটি অনানুষ্ঠানিক গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিয়েছিলেন। এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যা হলেও নেতা-কর্মীদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতেন। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ, রাজধানীর আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু এভাবে- ‘আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে, গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোন দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবারে আমার জীবনের ১০/১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোন দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করেনি। তাহলে বোধহয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে, আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তাঁর দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। মহিলার নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সে জন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।’ বেগম মুজিব হিসেবে বেগম মুজিব বঞ্চিত ছিলেন। তা নিয়ে কখনও অভিযোগ করতে কেউ শুনেনি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করতেন তাঁর স্বামী দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে। বেগম মুজিবের নামে প্রচুর পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল। সম্পত্তি থেকে যা আয় আসত তাঁর অংশটুকু নিজের হাতে এলেও পুরোটাই তুলে দিতেন স্বামীর হাতে।
রাজনীতির কারণে পারিবারিক জীবনে একটার পর একটা আঘাত এসেছে। কিন্তু বেগম মুজিব কখনও ভেঙ্গে পড়েননি বা মুজিবকে বলেননি, ‘তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও।’ সংসারটা বেগম মুজিব একাই চালাতেন। টাকা, শাড়ি, গহনা, বাড়ি, গাড়ি কোন কিছুর জন্যই কখনও বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত করেননি। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে যখন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন তখন মন্ত্রিত্বের সকল সুযোগ-সুবিধা ছাড়তে হয়েছিল। পরিবারের এই সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার ঘটনাটাও বেগম মুজিব হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন।
দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী থাকা রাজনৈতিক কর্মীদের পরিবারকে দেখাশোনা করতে হয়েছিল বেগম মুজিবকে। তিনি দুঃসময়ে কর্মীদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিতেন। কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং তাদের পরিচালনা করতেন। এমনকি তিনি অলঙ্কার বিক্রি করে সংগ্রহ করা তহবিল দলের কাজে সরবরাহ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সঙ্কটের সময়ে তিনি জনতা ও নেতাদের নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার লেখায় আরও স্পষ্ট হয়েছে বিষয়টি- ‘জেলখানায় দেখা করতে গেলে আব্বা তাঁর মাধ্যমেই দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ-খবর পেতেন। আব্বার দিকনির্দেশনা আম্মা নেতা-কর্মীদের পৌঁছে দিতেন। আব্বা কারাবন্দী থাকলে সংসারের পাশাপাশি সংগঠন চালানোর অর্থও আমার মা জোগাড় করতেন। তিনি কখনও ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকাননি। একদিকে যেমন সংসারের দায়িত্ব পালন অন্যদিকে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনাসহ প্রতিটি কাজে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে সেসময় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে খুব সক্রিয় দেখা গিয়েছে। তিনি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং প্রতিটি স্তরের আন্দোলনের সময় তাদের কার্যকলাপ অনুসন্ধান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বেগম মুজিবের পরামর্শে ছাত্র আন্দোলনের অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এমনকি তিনি কীভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবেন সে পরামর্শও দিতেন। প্রায় সকল ছাত্রনেতার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি ছিলেন কা-ারি। এভাবে তিনি কার্যত ছায়া নেতা হয়ে ওঠেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম মুজিব পুলিশ ও গোয়েন্দা চক্ষুর আড়ালে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। সংগঠনের অবস্থা অবহিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তা হুবহু পৌঁছানোর জন্য অসাধারণ স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন বেগম মুজিব। বেগম মুজিবের দুটি সিদ্ধান্ত বাঙালীকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল। প্রথমটি হচ্ছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে পাক সামরিক সরকার আটকে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে, তখন বেগম মুজিব মামলার আরও ৩৩ জন আসামিকে রেখে প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে রাজি না হতে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেন। কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য ৭ জুনের হরতালও সফল হয়েছিল বেগম মুজিবের প্রচেষ্টায়।
বেগম মুজিবের আরেকটি সিদ্ধান্তকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধু তাঁর দলের সদস্যদেরও কাছ থেকে কী বলবেন এবং কী বলবেন না সে সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত পেয়েছিলেন। এগুলো তাঁর মনে এক ধরনের বিভ্রান্তি ও চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে বেগম মুজিব তাঁকে অন্য কারও চেয়ে বেশি বুঝতেন। তাই স্বামীকে দিয়ে বলেছিলেন- ‘আপনার মনে যা আছে তাই বলুন। আপনার কথা হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আপনি যা বলতে চান, নিজের মন থেকে বলুন।’ যা কার্যত বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগকে এড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য একটি জাদু হিসেবে কাজ করেছিল। বঙ্গমাতা তাঁর বুদ্ধি, দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তবচিত মূল্যায়ন এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘তিনি বাবাকে শত দুঃখ-কষ্টেব মধ্যে অনুপ্রাণিত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে মায়ের ইতিবাচক সমর্থন ছিল।’ (‘আমার মা ফজিলাতুন্নেছা’, শেখ রেহানা, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মারক গ্রন্থ, সম্পাদনায় ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, বৈশাখী প্রকাশনী, ১৯৯৮,পৃ-২৪’)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায়-‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে ছিলেন। যখন ঘাতকরা আমার বাবাকে হত্যা করল, তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, ‘ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ আমাকেও মেরে ফেল।’ এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন’।
লেখকঃঅধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান -সাবেক উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |