আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:৪৯
ফরিদপুর: গুজব ছড়িয়ে ৫ এপ্রিল রাতে ফরিদপুরের সালথায় তিন ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে বিভিন্ন সরকারি অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ‘নেপথ্য নায়ক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইমারত হোসেন পিকুল মোল্যা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
সহিংসতার ঘটনায় পাঁচ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় পিকুল মোল্যাকে আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। গাঢাকা দিয়ে প্রতিদিনই ফেইসবুক লাইনে এসে উপজেলা প্রশাসন নিয়ে নানা উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন তিনি। এতে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত পিকুলকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
গ্রামের একাধিক মাতবর ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধি জানান, প্রথমে ঘটনাটি সীমিত পরিসরে থাকলেও পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার কারণে ভয়াবহ রূপ নেয়। হাজার হাজার মানুষকে উসকে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন পিকুল মোল্যা ও তার লোকজন।
স্থানীয়রা জানায়, ২৫ জানুয়ারি সালথা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে উপজেলা প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুল। ওই সময় ১৮ অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয় প্রশাসন। এ ঘটনায় পিকুল ও তার সমর্থকরা ক্ষোভের কথা বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন। সহিংতার ঘটনায় পিকুল তার সহযোগিরা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। হামলায় সরাসরি অংশ নেন এবং হামলাকারীদের অস্ত্র, ঢাল ও বাঁশ-কাঠ সরবরাহ করেন তারা।
আরো জানা যায়, গত ২৩ মার্চ রাতে সালথা প্রেস ক্লাবের নবনির্মিত ভবনের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়। এর নেপথ্যেও ছিলেন ইমারত হোসেন পিকুল। যে জমিতে সালথা প্রেস ক্লাবের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল, সেই জমি পিকুল তার লোকদের জন্য লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ভূমি অফিস জমিটি তাদের না দিয়ে প্রেস ক্লাবকে দেয়। এ কারণে আরো ক্ষিপ্ত হন পিকুল। আর এ ক্ষোভ থেকেই স্থানীয়দের উসকে দিয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিকুলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সরকারি জমি দখল করে এলাকায় আলোচিত হন।
ওই ঘটনার রাতের প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি সালথা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে উপজেলা প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ হন স্বেচ্ছাসেক লীগ সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুল। এ ছাড়া পিকুলের ভাই এনায়েতের দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করে প্রশাসন। এ ঘটনায় পিকুল ও তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হন। তার ক্ষোভ বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই ক্ষোভের কারণে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই জনতার ক্ষোভের তিলকে মদদ ও রসদ দিয়ে তাল বানাতে সাহায্য করেছেন তিনি ও তার অনুসারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা সদরে বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি জানান, ইমারত হোসেন পিকুলের হাতুড়ি বাহিনী নামে পরিচিত ৫০-৬০ জনের একটি দল প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে এবং একপর্যায়ে ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে তারা এগিয়ে এসে কলেজ সড়কের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষুব্ধ জনতাকে উত্তেজিত করে তাদের নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্স ও থানা ঘেরাও করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ এসে উপজেলা পরিষদ ও থানার চারদিকে যখন অবস্থান নেয়। এসময় পিকুলের হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যরা উত্তেজিত জনতাকে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবারহ করে।
তারা আরো বলেন, এ সময় পিকুল বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র সরবারহ করতে দেখে স্থানীয় সালথা বাজার এলাকার মুরব্বীরা তাদের বাধাও দেন। তবে এ বাধা উপেক্ষা করে বাহিনীর সদস্যরা হামলায় অংশ নেয়। তারা অংশ নেয়ার পরেই মূলত সরকারি অফিস ও স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। হামলা চলাকালে পিকুলের কয়েকজন সমর্থক সরাসরি ফেইসবুক লাইভে এসে ক্রমাগত উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে সবাইকে উত্তেজিত করেন এবং আশেপাশের গ্রামের লোকদের এ কাজে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পাশে ইমারত হোসেন পিকুলের বাড়ি হওয়ার সদরের রাজনীতিতে তার আধিপত্য রয়েছে। উপজেলার পাশের থাকা এ নেতা ও তার সমর্থকরা যদি এই হামলায় ইন্ধন না দিত কিংবা অংশ না নিত তাহলে এভাবে হামলা করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে পারত না। হামলাকারীরা ইন্ধন পেয়েই উৎসাহ নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ ঘটনায় অংশ নেওয়াদের উস্কে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন পিকুল মোল্যা।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিব সরকার বলেন, তাণ্ডবের ঘটনার (ভূমি অফিস ভাঙচুর) মামলায় পিকুল মোল্যাকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আসামি হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ফেইসবুকে বিরূপ মন্তব্য করছেন। এগুলো আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (সালথা-নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পিকুলকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। খুব দ্রুতই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমারত হোসেন পিকুল মোল্যা বলেন, আমি এ হামলায় যুক্ত নই। আমি আমার এলাকা রামকান্তপুরের উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। তবে তিনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয় প্রশাসনের সঙ্গে অসন্তোষ ও ফেইসবুকে তার বিরূপ মন্তব্যের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ইউএনও-এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেছি বিধায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত না।
গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তিকে প্রহারের অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে প্রশাসনের তদন্তে এর সত্যতা মেলেনি।
তবে এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এসিল্যান্ড তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে যান এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল উপস্থিত হয়। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।
পরে পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদ্রাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেপ্তার গুজব ছড়িয়ে দেয়। এরপর হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থান দুই ব্যক্তি মারা যান।
সালথায় সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্তত তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
রোববার (১১ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লা। তিনি জানান, তদন্তে ক্ষয়ক্ষতির যে বিবরণ পাওয়া গেছে, তাতে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |