আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:১৬
ঢাকা : কম দামে জমি কিনতে না পেরে জমির মালিককেই হত্যার পরিকল্পনা করেন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এমএ আউয়াল। এজন্য তার নিজের ক্যাডার বাহিনী গিয়ে জমির মালিক সাহিনুদ্দীনকে (৩৩) সন্তানের সামনেই নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করে কিলার সুমন এমপি আউয়ালকে ফোন করে বলেন, স্যার ফিনিশড’।
সুমনের সংগে কথোপকথনের মধ্যে এই ‘ফিনিশড’ শব্দ থেকেই সাহিনুদ্দীন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আউয়ালকে চিহ্নিত করে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকালে র্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত ১৬ মে দুপুরে নিজ সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ঘটনায় সম্পৃক্তদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে ১৯ মে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতা হিসাবে ২০ মে দিবাগত ভোর রাতে সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে (৫০) ভৈরব থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন ভোরে পটুয়াখালীর বাউফল থেকে অপর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সংগে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মঈন বলেন, মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এজন্য হত্যার ঘটনার চার পাঁচদিন আগে দুপুর বেলা সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ তাহের ও সুমন এই হত্যার পরিকল্পনা করে। এ সময় মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। আর সুমনকে একাজে সহযোগিতা করে তার বেশ কয়েকজন পরিচিত সদস্য।
কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সুমন, বাবুসহ কয়েকজন মিলে একটা মিটিং করে। এরপর ঘটনার দিন তারা সাহিনুদ্দিনকে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়। এসময় সাহিনুদ্দিন তার সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে সেখানে যায়। মীমাংসার কথা বলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী সুমন, মানিক, হাসান, ইকবালসহ ১০/১২ জন সাহিনুদ্দিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, প্রথম ধারোলো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় সুমন। এরপর মানিকসহ বাকিরা কোপাতে থাকে। মনির হাঁটুতে এবং মানিক উপর্যুপরি সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে জখম করতে থাকে। এসময় বাবুসহ অন্য আসামি বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে পুরো ঘটনাটি শেষ হয়। ঘটনা শেষে সুমনসহ বাকিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় সুমন এক নম্বর আসামি আউয়ালকে মোবাইলে জানায় ‘স্যার ফিনিশড’।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দেয়। ১৭ মে মামলার ১৩ নম্বর আসামি দিপুকে র্যাব-৪ গ্রেফতার করে পল্লবী থানায় সোপর্দ করে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার আল মঈন বলেন, মূল আসামি এম এ আউয়াল একজন জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত এবং প্রতিমাসে মাসোহারা বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা নিত। তাছাড়া বিভিন্ন কাজেও টাকা নিতো। এই সন্ত্রাসী দল ওই এলাকায় রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত ছিলো।
তিনি বলেন, নিহত সাহিনুদ্দীন ও সুমন গ্রুপের মধ্যে গত দুই মাসে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পল্লবী থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। আলীনগর বুড়িরটেকে আউয়াল একটি আবাসন প্রজেক্ট করেছেন। সেখানে সাহিনুদ্দিনের পরিবারের জমি রয়েছে। সেই জমি দখল করে নিতে চেয়েছিলেন আউয়াল। এ জন্যই মূলত তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। প্রথমে দখল করতে না পেরে কম দামে কিনতে চেয়েছিলেন জমিটা। তাও যখন পারছিলেন না তখন হত্যার পরিকল্পনা করেন আউয়াল।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এমএ আউয়াল নিজের আবাসন প্রকল্প পাহারার কাজে সন্ত্রাসী লালন-পালন করেন। কিলার সুমনকে আউয়াল মাসে ১০/১২ হাজার টাকা দিতেন। হত্যাকাণ্ডে তাদের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। তবে এ কাজে কত টাকা ব্যয় হয়েছে নির্দিষ্ট করে তা এখনও জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, এমএ আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে তরিকত ফেডারেশন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
শৃঙ্খলাভঙ্গ ও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় দলের গঠনতন্ত্রের ২৪ এর উপধারা অনুযায়ী ২০১৮ সালে আউয়ালকে দল থেকে বহিষ্কার করে তরিকত ফেডারেশন। পরের বছরই ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন আউয়াল। বর্তমানে তিনি দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |