- প্রচ্ছদ
-
- ঢাকা
- অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজে বাধা, মামলায় গ্রেপ্তার ৪
অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজে বাধা, মামলায় গ্রেপ্তার ৪
প্রকাশ: ২২ মে, ২০২১ ৫:২১ অপরাহ্ণ
মোঃ শরীফুল ইসলামঃ- টাঙ্গাইলের সখিপুরে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে তাঁদের গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গ্রামবাসী শনিবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শামসুর রহমান বাদী হয়ে উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের ৩০ জনকে আসামি করে সখিপুর থানায় মামলা করেন।গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাজমুল হোসেন (৩০), খোরশেদ আলম (৫৫), সোহেল মিয়া (৩০) ও গুলজার হোসেন (৫০)। তাঁদের সবার বাড়ি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিমাবংকী গ্রামে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ‘ধনুয়া-এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়-নকলা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাঁচ মাস ধরে সখিপুর পৌরসভার ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিমাবংকী অংশে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে।প্রকল্প পরিচালক শামসুর রহমান দাবি করেন, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি মালিকদের ন্যায্য পাওনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও গত ৫ মাসে কমপক্ষে ১০ বার কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরপর ১০ বার কাজে বাধা দেওয়ায় ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছেন। বাধ্য হয়েই মামলার আশ্রয় নিতে হয়েছে।পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রতিমাবংকী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, তাঁর ২২ শতক জমির ওপর দিয়ে গ্যাসলাইন যাচ্ছে। অধিগ্রহণ হলেও তাঁকে টাকা না দিয়েই তাঁরা কাজ শুরু করেছেন।ওই গ্রামের মীর্জা সাঈদ, চানমিয়া, আবদুল আউয়াল, বিল্লাল হোসেন, আবদুল আজিজ বলেন, গ্যাসলাইনের কারণে ঘরবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণের তালিকাও হয়েছে। অথচ তাঁদের ন্যায্য পাওনা না দিয়েই প্রকল্পের লোকজন কাজ করছেন। তাঁরা অনেকবার বাধা দিলেও তাঁরা কাজ করেই যাচ্ছেন। এখন তাঁদের নামে মামলা করেছেন।উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার কিছু জমির মালিকানা নিয়ে সরকার এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বংশপরম্পরায় এসব জমিতে বসবাস করে আসা মানুষ মালিকানা দাবি করলেও প্রশাসন বলছে, এগুলো খাসজমি। ফলে প্রকৃত জমির মালিকেরা অধিগ্রহণের টাকা পেলেও এসব জমির মালিকানা দাবি করা ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাননি। এসব জমির খাজনা গ্রহণও বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এর মধ্যে বেশকিছু বন বিভাগের জমি রয়েছে। সখিপুর উপজেলার ১৪ মৌজার প্রায় ৩৫ হাজার একর জমি নিয়ে যে জমি জটিলতা রয়েছে তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম চলে আসছে।সখীপর উপজেলারস্থানীয় মানুষের সংগঠন উপজেলা ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, উপজেলার ১৪টি মৌজার প্রায় ৩৫ হাজার একর জমি শত বছর ধরে ভোগদখলে থাকলেও ভূমিমালিকেরা এসব জমির খাজনা দিতে পারছেন না। এসব সমস্যার সমাধানে তাঁদের কমিটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে সরকার সচিবপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। গড়গোবিন্দপুর ও প্রতিমাবংকী মৌজার ওপর দিয়ে গ্যাসলাইনের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। ওই দুই মৌজার শতাধিক ভূমিমালিক জমি অধিগ্রহণের নোটিশ পেলেও এখনো তাঁদের বাড়িঘর, গাছপালার ক্ষতিপূরণ ও জমি অধিগ্রহণের মূল্য পাননি।গড়গোবিন্দপুর গ্রামের সুফিয়া খাতুনের স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার শেষ সম্বল চার শতাংশের বাড়ি। ওই বাড়ির ওপর দিয়ে গ্যাসলাইনের পাইপ বসানো হবে। আমার ঘর ভেঙে নিয়ে গেছি। আমি আমার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আমি এখনো বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ পাইনি।’ওই গ্রামের ইউসুফ আলী ও তাঁর সাত ভাইয়ের ৫৬ শতাংশ জমির ওপর দিয়ে ওই লাইন যাচ্ছে। অধিগ্রহণের সময় নোটিশও পেয়েছেন। তাঁরা সাত ভাই মিলে দুই কোটি ৬৪ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। ইউসুফ আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন‘আমরা এক টাকাও পাইনি। এ কারণেই আমরা দুই মৌজার শতাধিক ভুক্তভোগী মিলে ওই কাজে বাধা দিয়েছি।’
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু সাঈদ বলেন, প্রতিমাবংকী গ্রামের শতাধিক লোক টাকা পাননি। তাঁদের পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো মামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে গ্রামবাসী সভা করে শনিবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।সখিপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহিন মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হওয়ার পর শুক্রবার ভোরে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Please follow and like us:
20 20