আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:২৪
বিডি দিনকাল ডেস্কঃ- কয়েক বছর ধরেই গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। কারণ প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইস্যুতে তিনি সরব থাকতেন। বলা হতো, অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা কিছু বলুক আর নাই বলুক; রিজভী আহমেদ কোনো বক্তব্য নিয়ে হাজির হবেনই।
কিন্তু দুই মাস ধরে সেই রিজভী গণমাধ্যমে অনুপস্থিত। এখন তিনি অনেকটাই নীরব। নিয়মিত নেই তাঁর কোনো বক্তব্য বা ব্রিফিং। আদাবরের বাসায় তিনি নীরবে-নিভৃতে দিন কাটাচ্ছেন। কথা বলতেও তাঁর কষ্ট হচ্ছে। খেতে পারছেন অতি সামান্যই। করোনা-পরবর্তী জটিলতা কাটিয়ে উঠতে তাঁর আরো বেশ কিছুদিন লাগবে। শ্বাসকষ্টের জন্য এখনো তাঁর অক্সিজেন লাগছে।
গত শনিবার রিজভী আহমেদের আদাবরের বাসার ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই চারটি সিলিন্ডার দেখে চোখ আটকে যায়। বোঝা যায়, বাসায় করোনা রোগী রয়েছে। বেডরুমের খাটের পাশেও সিলিন্ডারের সঙ্গে রয়েছে পালস অক্সিমিটারের মনিটরিং। প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে অনেক কষ্টে উঠে বসেন রিজভী আহমেদ। জানালেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতির মাত্রা অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে। প্রতিদিন মাত্র ১ থেকে ২ পার্সেন্ট। এখনো শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য দিন-রাতের অনেক সময়ই অক্সিজেন নিতে হয়। এমনকি গোসল বা প্রাকৃতিক কর্মের জন্য বাথরুমে গেলেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
রিজভী আহমেদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলামের মতে, ‘যেকোনো স্ট্রেসফুল কন্ডিশনেই তাঁর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।’ তিনি জানান, রিজভী আহমেদের শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও রুটিন চেকআপ চলছে।
অত্যন্ত মৃদুস্বরে আলাপের সময় রিজভী আহমেদ কিছু সময়ের জন্য বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমি মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি। জীবন-মৃত্যুর ধারণাই আমার বদলে গেছে। কিসের রাজনীতি! কিসের পব-পদবি, কিসের কী! এগুলো খুবই সাময়িক। জীবনের কাছে এগুলোর মূল্য তুচ্ছ!’
করোনা প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ না করেও বেশ আলোচিত হয়েছিলেন রিজভী আহমেদ। কথায় কথায় জানালেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের কারণে টিকা নিইনি।’তাছাড়া টিকা নিলেও যে আমি বেঁছে যাবো এমন তো কথা নয়, অনেকে তো টিকা নেয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন,আবার অনেকে চলে গিয়েছেন পর পারে l
গত ১৬ মার্চ করোনায় আক্রান্ত রিজভী আহমেদকে পরের দিন ১৭ মার্চ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১ এপ্রিল হঠাত্ করেই অবস্থার অবনতি এবং অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানাস্তর করা হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ আইসিইউতে অবস্থানকালে কয়েকবার তাঁর অবস্থা খারাপের দিকে যায়।
ওই ঘটনা স্মরণ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আইসিইউতে সব সময়ই আমি অক্সিজেনের প্যারামিটারের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কখন এটির মাত্রা ৩০-৪০-এর নিচে নেমে আসবে। কিন্তু তার বদলে এটি প্রায়ই ৭০-এর ঘরে চলে যেত। তখন মনে হতো, মৃত্যু বুঝি আর বেশি দূরে নেই। অথবা মৃত্যুর মধ্যেই যেন আমি হারিয়ে গেছি।’ রিজভী বলেন, ‘আইসিইউর ক্যাপাসিটির সম্ভবত সর্বশেষ সীমায় আমার অবস্থা চলে গিয়েছিল। মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছি। দুঃসহ সেই কষ্ট থেকে বলছি, আমার চরম শত্রুরও যেন এই কভিড না হয়!’
‘আমি তো এরশাদবিরোধী আন্দোলনে থ্রিনটথ্রি রাইফেলের বুলেট খাওয়া মানুষ। ৪৮ ঘণ্টা হরতালের সেই কর্মসূচি পালনের দিন গুলি আমার পেটে ঢুকে গিয়েছিল। সেখান থেকে বেঁচে আসা মানুষ। আমার সামনেই জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ মারা গেল। কিন্তু কভিড এবং পরবর্তী জটিলতা যেন তার চেয়েও ভয়ংকর আর অসহনীয় কিছু,’ বলেন রাকসুর সাবেক ভিপি রিজভী। তিনি বলেন, ‘গত বছর গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার ড্রাইভার স্পটেই মারা গেলেন। অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। ওই দুর্ঘটনার কারণে আমার পায়ে এখনো রড লাগানো আছে। এসবও হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার এই দুঃসহ স্মৃতি কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।’
আলাপের মাঝখানে চলে আসেন রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা আইভি। বলেন, ‘আমারও করোনা হয়েছিল। কিন্তু ওর অবস্থা দেখে নিজেকে দেখার সময় পাইনি।’ অনেক বছর আগের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘২০ বছরেরও বেশি হলো আমার মা ও শাশুড়ি মারা গেছেন। সেসব স্মৃতি হয়তো ভুলতে পেরেছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকরা যখন ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলাম না। কারণ ও যেতে চাইছিল না। হাসপাতালের বেডের খাট আঁকড়ে ধরে ও বারবার বলছিল আমি ওখানে যাব না।’
বেডরুমে বসে কথার মাঝখানেই অনেক কষ্টে খাট থেকে চেয়ারে গিয়ে বসেন রিজভী। এরপর হাঁটুর মাংসপেশির জায়গাটুকু দেখিয়ে বলেন, ‘এখন তো তবু মানুষের মতো দেখায়। কদিন আগেও হাড়ের সঙ্গে শুধু চামড়াটুকু ঝুলছিল!’
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কবে দেখা যাবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো জানি না। আগে সুস্থ হই। সুস্থ হওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
করোনামুক্ত হয়ে গত ৯ মে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন রিজভী আহমেদ। তবে এখনো তিনি করোনা-পরবর্তী জটিলতায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |