আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:৪০
নারায়ণগঞ্জ:-২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও গত ১০ বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলায় দুই লাখ অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। ২০১৩ সালের ৭ মে আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও গেল কয়েক বছরে গড়ে ওঠা হাজার হাজার বাড়িঘরে চলছে গ্যাসের চুলা। শুধু আবাসিক বাসাতেই নয়, শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জে বাণিজ্যিক লাইনেও রয়েছে অবৈধ সংযোগ নেয়ার উৎসব।
জানা গেছে, এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে অনেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, রাজনৈতিক নেতা ও তিতাসের দালালচক্র আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তিতাস কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস পরপরই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও রহস্যজনক কারণে কয়েকদিনের মধ্যেই এসব সংযোগ পুনরায় চালু হয়ে যায়। এমনকি তিতাস কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় মামলা করলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান।
তবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মোহাম্মদ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আগামী ২ মাসের মধ্যে সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। সেখানে নারায়ণগঞ্জকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, তিতাসের পক্ষে একা এ বিশাল কাজটি করা কষ্টসাধ্য। তাই এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
জানা গেছে, কোনো এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে প্রধান ভ‚মিকা নিয়ে থাকেন ওই এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কাউন্সিলররা। এর পরের ধাপটি পালন করেন রাজনৈতিক প্রভাবশালী বা স্থানীয় নেতা এবং ঠিকাদার। মূলত ঠিকাদার আর রাজনৈতিক নেতারা এক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক। তৃতীয় ও শেষ ধাপে আছেন তিতাসের লাইনম্যান ও মধ্যম শ্রেণির কর্মচারী-কর্মকর্তা। কোনো গ্রাহক গ্যাস নিতে চাইলে সর্বপ্রথম দ্বারস্থ হন স্থানীয় ঠিকাদারের। অনুমতি না থাকলেও ভবিষ্যতে লাইনটি বৈধ বলে চালিয়ে দিতে নির্দিষ্ট সরকারি ফিও জমা দেন কেউ কেউ। এরপর ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্য রয়েছে ওই এলাকার লাইনম্যান ও তিতাস অফিসের নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে দেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। গ্রাহকের পেশা বুঝে দরদাম ঠিক হলে শুরু হয় লাইন দেয়ার কাজ। জানা গেছে, গত এক দশকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিতে ঠিকাদাররা এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছেন যে, এখন আবাসিক সংযোগ দিতে তিতাসের নিজস্ব কর্মী বা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। এলাকাভিত্তিক ওয়েল্ডিং (ওয়ার্কশপ) মিস্ত্রি দিয়েই কাজ সারছেন তারা।
২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনেই জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নের ১১ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিতাসের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় তিতাস কর্তৃপক্ষ বন্দর থানায় ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ৯ জনকে আসামি করে মামলা করলেও গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি। আর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ও ১৯ আগস্ট শুধু বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নেরই ৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বন্দরের সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডে গ্যাস সংযোগের তদারকিতে আছেন স্থানীয় কাউন্সিলর, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। প্রতি গ্যাস সংযোগের জন্য প্রতিটি বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এ চক্রের সদস্যরা। বন্দর উপজেলার মুসাপুর ধামগর ইউনিয়নের গোকুলদাসেরবাগ, কুটিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মাটির ওপর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ, জরাজীর্ণ লোহার পাইপ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নেয়া হয়েছে গ্যাসলাইনের সংযোগ।
টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠলেও বন্দরের মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু তদারকি করেছি, যেন ঠিকাদাররা মানুষের টাকা না মেরে দেয় ও গ্যাসলাইন যাতে পায়। উপজেলায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বন্দর ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন। এ ২ ইউনিয়নেই রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ লাইন।
সোনারগাঁর পৌর এলাকা ছাড়াও ১০টি ইউনিয়নের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, পুরো শিল্পাঞ্চল কাঁচপুরের অবৈধ গ্যাস সংযোগের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর ও ঘনিষ্ঠ লোকজন। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল কাঁচপুর, বিসিকসহ আশপাশের শিল্পঘন এলাকায় রীতিমতো তিতাস গ্যাসের হরিলুট চলছে। এসব এলাকায় আবাসিক বাসা-বাড়ি ছাড়াও রয়েছে ছোট-বড় কয়েকশ’ শিল্প প্রতিষ্ঠান। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক যে কোনো গ্যাস সংযোগ নিতে হলে চেয়ারম্যান মোশারফকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। পাশাপাশি যারা আগেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকেও প্রতি মাসে চেয়ারম্যান মোশারফকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা দেয়া হয় বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন তিনি। জানা গেছে, সোনারগাঁ পৌরসভার সাহাপুর এলাকায় তিতাসের প্রধান লাইন থেকে অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে বৈদ্যেরবাজার ও বারদী ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ গ্যাস ব্যবহার করছে। গত বছর এক অভিযানে এই এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় প্রায় চার হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন পরই সেই সংযোগ রহস্যজনক কারণে ফের চালু হয়।
যেখানে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পাঞ্চল রূপগঞ্জের অর্ধশত শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার হুমকিতে, সেখানে পুরো উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাসলাইন। পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার বৈধ গ্রাহকের জন্য ৪, ৩, ২ ও ১ ইঞ্চি ব্যাসের বিতরণ লাইন রয়েছে। এসব লাইন থেকে অবৈধ উপায়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে দেয়া হচ্ছে সংযোগ।
সিদ্ধিরগঞ্জের ১৬টি চুনা ফ্যাক্টরি ও প্রায় ২০টির বেশি মশার কয়েল ফ্যাক্টরির কাছে যেন তিতাস কর্তৃপক্ষ অনেকটাই নমনীয়। গত কয়েক বছরে যে কয়েকটি মশার কয়েল ফ্যাক্টরি সিলগালা করা হয়েছে তার চেয়েও বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে। পাশাপাশি ১০ বছরে সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন গড়ে ওঠা কয়েক হাজার বাসা-বাড়িতে চুলা জ্বলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েই। এদিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার ফতুলা, আড়াইহাজার ও সদর এলাকাতেও। একই পন্থায় এসব এলাকাতেও নেয়া হয়েছে অগণিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |