আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:১৫
ড. আবদুল মতীন:-
বিনম্র শ্রদ্ধা তোমার স্মৃতির মিনারে
অধ্যাপক ড. আবদুল মতীন,
শিক্ষকদের শিক্ষক তুমি
সর্বজনশ্রদ্ধেয় গুণীজন,
শত সহস্র অভিবাদন তোমায়
প্রথিতযশা দার্শনিক তুমি,
প্রিয় শিক্ষক আমাদের,
সযতনে রেখেছি তোমায়
হৃদয়ের মনিকোঠায়-
চেতনার সদর দরজায়;
ঋষিতুল্য হৃদয়বান শিক্ষাগুরু তুমি
জয় করেছ আমাদের সকলের হৃদয়,
পাওয়া যাবে না তোমায়
কোনো কাব্যিক ভাবনায়,
বোঝা যাবে না তোমার বিশালত্ব,
মহাকাব্যের মহাচিন্তক তুমি।
নীরবে নিভৃতে চলে গেলে তুমি
মৃত্যুহীন মৃত্যুর অমর মহাকাব্য হয়ে
দার্শনিক কবিতার উৎসরূপে,
বুকে কষ্টের পাথর বসিয়ে
বোধ-বুদ্ধি, উপলব্ধি-অনুভূতি সহ
হৃদয়তন্ত্রীর নানা অ্যাপসের গ্রন্থীগুলো
ছিন্নভিন্ন করে-
মস্তিষ্কের গুগল ড্রাইভের তার ছিঁড়ে
পাড়ি জমালে তুমি
অজানা-অচেনা অনির্দিষ্ট গন্তব্যে;
ঢাবির শতবর্ষে খসে পড়লো
একটি অধিকতর পরিণত নক্ষত্র-
পরিসমাপ্তি ঘটলো একটি যুগের,
একটি সমৃদ্ধ দার্শনিক অধ্যায়ের।
অব্যক্ত-অস্পষ্ট থেকে গেল
দার্শনিক সব বোঝাপড়া,
সৃষ্টি হলো এক বিশাল শূণ্যতা,
নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ দার্শনিক তুমি-
অন্তর্মুখী তোমার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য
নিজেকে প্রকাশে অনিহা;
মস্তিষ্ক তোমার দার্শনিক ভাবনায় ঠাঁসা,
‘দর্শন সাগর’ খ্যাত
হরিদাস ভট্টাচার্যের পথ পরিক্রমায়-
ড. জিসি দেবের মানবতাবাদের আবহে
সমন্বয়ী ভাবনার বিশাল ক্যানভাসে
হয়ে উঠলে তুমি এ যুগের ‘দর্শন মহাসাগর’,
পরিণত হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের
দার্শনিক প্রেরণার উৎসমূলে।
প্রিয় মতীন স্যার আমাদের-
শ্বাসরুদ্ধকর সঙ্গনিরোধের নিসঙ্গতা
আর পাথরচাপা করোনা কষ্ট সঙ্গী করে
বিদায় নিলে তুমি
আমাদের বুক খালি করে,
রেখে গেলে দার্শনিক ভাবনার খোরাক
পরবর্তী প্রজন্মকে ভাবাতে;
১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হলো
তোমার পরিণত দার্শনিক চিন্তার ফসল
‘অ্যান আউটলাইন অব ফিলসফি’-
মৌলিকত্বে পরিপূর্ণ দর্শনের অ আ ক খ,
নির্বাচিত হলো যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে
সূচনাপর্বের শিক্ষার্থীদের হাতেখড়ি নিতে,
সহজ-সরল-সাবলীল
অথচ গভীর, নিগুঢ় দার্শনিকতার ছাপ
এর প্রতিটি পাতায় পাতায়,
শব্দে-বাক্যে-ভাষায়-ভাবনায়
যা হয়ে উঠলো এক ধ্রপদী সাহিত্য।
অনুসন্ধানী গবেষক তুমি,
অধিকতর পরিণত ভাবনা তোমার
প্রতিফলিত হলো ১৯৬৯ সালে-
টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে
পিএইচডি থিসিসে-
বিশ্লেষণী দর্শনের সত্যতা বিষয়ক
অস্টিন-স্ট্রসন তত্ত্বের মহাবিতর্কে,
ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনায় বিতর্কে
অবতীর্ণ হলে তুমি
স্বয়ং দার্শনিক অস্টিনের সঙ্গে;
যে বিষয়ে ভাবতে হিমশিম খায়
পশ্চিমা জগতের বিদগ্ধ পণ্ডিতবর্গ-
বেছে নিলে তুমি তেমন কঠিন বিষয়,
সহজবোধ্য হয়ে উঠলো যা
তোমার গবেষণা কর্মে,
মৌলিক অনুবাদ আর সংকলন গ্রন্থে।
প্রিয় শিক্ষাগুরু আমাদের-
পরবর্তী বিতর্কে অংশ নিলে তুমি
প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে
দার্শনিক যুক্তিবিদ্যা নিয়ে-
মার্কস-এঙ্গেলস প্রণীত
দ্বান্দ্বিক চিন্তাপদ্ধতির যৌক্তিকতা
প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে,
যুক্তিবিদ ডুরিং-এর পথ ধরে
মানববিদ্যা বক্তৃতায় দাবি করলে-
প্রয়োজন নেই দ্বান্দ্বিক যুক্তিবিদ্যার,
শুরু হলো গুরু-শিষ্যের বিতর্ক
২০০৭ সালে গুরুভাবনার প্রতিক্রিয়ায়,
গুরুর যুক্তির আলোকে শঙ্কিত হৃদয়ে
প্রতিযুক্তি উপস্থাপনে প্রতিদাবি জানালাম
দ্বান্দ্বিক যুক্তিবিদ্যার প্রাসঙ্গিকতার পক্ষে,
সযত্নে নিবিষ্ট মনে পাঠ শেষে
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে মৃদু হেসে
পিতৃসুলভ স্নেহভরা চোখের ভাষায়,
আনন্দানুভূতি প্রকাশে স্বীকৃতি দিলে তুমি
যৌক্তিক চিন্তন প্রক্রিয়ার।
মহান শিক্ষাচার্য শ্রদ্ধাভাজনেষু,
রেখে গেলে আমাদের জন্য
‘দর্শন সাহিত্য ও সংস্কৃতি’র জ্ঞানভান্ডার-
দার্শনিকের মুক্ত চিন্তা
আর বিচারধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে
হয়ে উঠলে তুমি ব্যতিক্রমী,
না কবিতা না গান-
ভাবানুভূতির বহিঃপ্রকাশ বলে
‘দুই পৃথিবী’ নামক গ্রন্থ রচনা করে
জাগিয়ে তুললে তুমি
সংবেদনশীল অনুভূতিপ্রবণ মানবহৃদয়;
তত্ত্বদার্শনিক কথাশিল্পী তুমি-
তোমার লেখা নাটক ‘তত্ত্ব বিভ্রাট’
বিটিভিতে প্রচারিত হলো ১৯৭৬ সালে
প্রিয় ছাত্র খ ম হারুনের পরিচালনায়,
‘বাঁধন খুলে দাও আমার বাঁধন খুলে দাও’-
তোমার রচিত সংগীতের সুর
ধ্বনিত হলো বিটিভিতে-
‘শঙ্কিত পদযাত্রা’ নাটকের সূচনালগ্নে,
জনপ্রিয়তা পেল তা তিমির নন্দীর কণ্ঠে।
যুক্তিবাদী চিন্তক তুমি
উদার তোমার মন,
আলোকিত মানুষ তৈরিতে
রচনা করেছ ‘যুক্তির আলোকে’,
বিশ্লেষণী দার্শনিক তুমি
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছ
শব্দ বাক্য ভাষার গূঢ়ার্থ,
ভাষাশিল্পী তুমি
ভাষার কারুকাজ নিয়ে খেলেছ
শিল্পীর তুলির আচড়ে সাবলীলভাবে;
বাংলাদেশের বার্ট্রান্ড রাসেল তুমি
দিগন্ত বিস্তৃত প্রসারিত তোমার দৃষ্টি,
প্লেটোর রিপাবলিকের সঙ্গায়-
দার্শনিক তুমি, অল্পতে তুষ্ট নও-
সব ধরণের জ্ঞানের স্বাদ আস্বাদনে
চিন্তা তোমার অন্তহীন অবিরাম অব্যাহত,
প্রাচ্যের জ্ঞানের সীমানা ছাড়িয়ে
পাশ্চাত্যের জ্ঞানসাগর পাড়ি দিয়ে
পরিণত হলে মহাসাগরের মহাজ্ঞানী,
কর্মে-কীর্তিতে বেঁচে থাকবে তুমি
চির ভাস্বর হয়ে
আমাদের স্মৃতিতে, চেতনার গভীরে।
—অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, প্রফেসর ড. হারুন রশীদ, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ইমেরিটাস অধ্যাপক দার্শনিক ড. আবদুল মতীনের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত)
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |