আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৮:৪০
ঢাকা: সম্প্রতি একটি মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা না করেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। কলেজ শিক্ষার্থী মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহে পুরুষের ডিএনএ পাওয়ার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি।
একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ, কিন্তু এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ‘অপ্রাসঙ্গিক’।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ এপ্রিল কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করার পর তার দেহে একজন পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে।
তবে, তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের ডিএনএ পরীক্ষা করার কোনো উদ্যোগ নেননি।
১৯ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হাসান জানান, উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শুধু বাদীর অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান প্রতিবেদনে উল্লেখিত কলেজ শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ থেকে একমাত্র অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জি জানান।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ‘তথ্যগত ত্রুটি’র কারণে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, কারণ তদন্তে আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে, ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু ডিএনএ পরীক্ষায় মৃত কলেজ শিক্ষার্থীর দেহে পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে, তদন্তকারীর অবশ্যই উচিত ছিল অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি, তদন্ত অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।’
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একজন সাধারণ নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা (জিআরও) জানান, তদন্ত প্রতিবেদনটি গৃহীত হবে কি না, সে বিষয়ে শুনানি গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়নি।
চলমান লকডাউনের কারণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত আছে। আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম আবারো শুরু হলে শুনানির জন্য নতুন দিন-তারিখ নির্ধারিত হবে বলে জানান তিনি।
মামলার বাদী ও নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে জানান, তারা আদালতে এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অনাস্থার অভিযোগ আনবেন।
তার দাবি, তিনি এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার আগে তাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
মামলার বাদী বলেন, আমি ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাব।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন দাবি করেন, ধর্ষণ ও হত্যার আলামত পাওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করেননি।
সারোয়ার অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলাটির তদন্ত করার সময় চরম দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সকল দায় থেকে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
মামলার বাদী জানান, তার বোনের শয়নকক্ষের দেয়ালে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি ঝোলানো ছিল এবং পুরো ফ্ল্যাট জুড়েই এরকম অসংখ্য ছবি ছিল।
তিনি বলেন, তার (কলেজ শিক্ষার্থী) দুটি ফোনের এসএমএস ও কল রেকর্ডে দেখা যায়, সে তাদের সম্পর্কটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও, তাদের সম্পর্কটি নিয়ে সামাজিক বাধাগুলোও আমার বোনের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ জানিয়েছিল, তারা আমার বোনের ফ্ল্যাটে ২৬ এপ্রিলের আগেও অভিযুক্ত ব্যক্তির আসা-যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের ফ্ল্যাটের শয়নকক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ২১ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলা দায়ের হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের তৎকালীন উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, তারা কলেজ শিক্ষার্থীর ছয়টি ডায়েরি খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগের স্বপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ আছে।
উপ-কমিশনার তার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীর যে ডায়েরিগুলো আমরা উদ্ধার করেছি, সেগুলোতে তার চরম হতাশা ও মানসিক বিপর্যস্ততা ফুটে উঠেছে। তার এই লেখা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হবে।
সুদীপ চক্রবর্তী আরও বলেন, …শিক্ষার্থী তার ডায়েরিতে তাদের সম্পর্ক, সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতিতে বাধা, অভিযুক্তের সঙ্গে তার সুখী দাম্পত্য জীবনের প্রত্যাশা এবং অভিযুক্তের পরিবারের বাধার কথা লিখেছেন।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |