আজ বুধবার | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৯:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক : সময় টিভির সাবেক এমডি আহমেদ জোবায়েরের ব্যাংকে ৭৬৫ কোটি টাকা— চমকে উঠার মতো শিরোনাম! খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে একটি টেলিভিশনের এমডি এতো টাকার মালিক হোন কিভাবে? বেতনের টাকায় এতো টাকার মালিক হওয়া কি সম্ভব? তথ্য মতে তিনি সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্সধারী মালিকও। তবুও কি ১৫/১৬ বছরে এতো সম্পদ গড়া সম্ভব? যেকোনো মানুষের মনেইই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। হ্যাঁ, এমন শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদন করেছে দুটি দৈনিক পত্রিকা। আর শিরোনাম দেখেই পাঠকের আগ্রহও জেগেছে খবর দুটি ঘিরে। কিন্তু রিপোর্টের ভেতর গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। শিরোনামে বলা হয়েছে— আহমেদ জোবায়েরের ব্যাংকে ৭৬৫ কোটি টাকা! কিন্তু ভেতরের তথ্য হলো তার ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে এই পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে দাঁড়ালো কি? ১৫/১৬ বছরে একটা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে এই পরিমাণ টাকার লেনদেন কি অস্বাভাবিক? নিশ্চয় না। এখানে একটা বিষয় স্মরণে আনা যেতে পারে— কিছুদিন আগে বেশকিছু গণমাধ্যম রিপোর্ট করলো সাংবাদিক মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে বেতনের বাইরে ১৩৪ কোটি টাকা জমা। ব্যাস, শিরোনাম দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়লো একশ্রেণির মানুষ। পরে জানা গেলো কি মুন্নী সাহার স্বামীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি অ্যাকাউন্টের তথ্য এটি। এবং মুন্নী সাহা সেই অ্যাকাউন্টের নমিনি মাত্র! অথচ ততোক্ষণে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এই অপতথ্য। নানা রকম ট্রলের শিকার মুন্নী সাহা। এই হলো কতিপয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নমুনা! আসা যাক আহমেদ জোবায়ের প্রসঙ্গে। দুই তিন দিনের ব্যবধানে প্রায় একই রকম খবর দুটি পত্রিকায় প্রকাশ এবং একটি টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে আসার পর এনিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন আহমেদ জোবায়ের।
২রা মার্চ নিজের ফেসবুকে আহমেদ জোবায়ের লিখেছেন— ”সম্প্রতি কয়েকটি মিডিয়ায় আমার ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৬৫ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্যের কথা উল্লেখ করে নিউজ ছাপা হয়েছে। এখানে আমার কোন বক্তব্য নেয়ার প্রয়োজন মিডিয়াগুলো অনুভব করেনি। আর এ কারণেই আমার এ ছোট্ট ব্যাখ্যা।
আমার ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বলতে সময় টিভি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৫ বছরে সময় টিভির অ্যাকাউন্টে লেনদেন হাজার কোটি টাকারও বেশি হবে। কারণ ২০২২ সাল থেকেই সময় টিভির বার্ষিক সেলসের পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সরকারকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স— ভ্যাট দেয়া প্রথম তিনটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সময় টিভি একটি। আর যে ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে এই লেনদেনের কথা উল্লেখ করে আমার কোন বক্তব্য না নিয়েই নিউজ ছাপা হচ্ছে, সে অ্যাকাউন্টগুলোতে সব লেনদেন যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয়েছে, আমার এবং সময় টিভির ব্যবসায়িক অংশীদার স্বনামধন্য সিটি গ্রুপের একজন প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আমার যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত সময় টিভির অ্যাকাউন্টগুলোতে কোন ব্যাংক লোন নাই।
এখানে স্পষ্ট করতে চাই- নিউজে যে টাকা বা ব্যাংক লেনদেনের কথা বলা হচ্ছে তা সবই প্রতিষ্ঠানের, মানে সময় টিভির। আমার ব্যক্তিগত কোনো একাউন্টের লেনদেনের তথ্য নয়।”
আহমেদ জোবায়েরর এই স্ট্যাটাস মূর্হুতেই ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মন্তব্য করতে থাকেন স্ট্যাটাসের নিচে। শাহজালাল নামে একজন লিখেন— হলুদ সাংবাদিকত। মাসুদ সিদ্দিকি লেখেন— এটা বাংলাদেশের মিডিয়ার চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। রূপ বদলে এদের বিন্দুমাত্র সময় লাগে না। সামান্য লাভের সামনে মাথা ঝোঁকাতে বা বিক্রি হতে এদের চেয়ে ফাস্টেট রানার পৃথিবীতে দুষ্কর। মাসুদ সিদ্দিকির কমেন্টের পাল্টা উত্তরে নীলু নাজির নামে একজন লেখেনএকদম ঠিক কথা বলেছেন, ধন্যবাদ। মোহাম্মদ কায়কোবাদ আকবর লেখেন— যা খুশি তাই হচ্ছে। এস এম বাবু নামে একজন লেখেন— সাপ্লাইকরা তথ্যভিত্তিক খবর পরিবেশসন কি শুধু আজকের? যুগ যুগ ধরে চলছে। সেটা আপনিও জানেন জো ভাই।
এমন আরো অসংখ্য কমেন্টের মাধ্যমে মানুষ জানান দিচ্ছেন নিজেদের অনুভূতি!
এখানে একটা বিষয় থেকে যাচ্ছে আলোচনার বাইরে সময় মিডিয়া লিমিটেডের লাইসেন্স আহমেদ জোবায়েরের নামে। পরে তিনি ফিনান্স পার্টনার বা অর্থলগ্নিকারী হিসেবে যুক্ত করেছেন স্বনামধন্য শিল্প গোষ্ঠী সিটি গ্রুপকে। কিন্তু এখন লাইসেন্সধারী আহমেদ জোবায়ের প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে। কিন্তু কেন তিনি বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন? কেন তিনি সাবেক হয়ে গেলেন সময় টিভির এমডি পদ থেকে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কি কেউ?
আহমেদ জোবায়েরের স্ট্যাটাস এবং গণমাধ্যম দুটির রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায় চটকদার ও বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে প্রতিবেদনের ভেতরে লেখা হয়েছে ভিন্ন কথা। শিরোনাম পড়ে পাঠকের ধারণা হতে আহমেদ জোবায়ের কিংবা অন্যরা মোটা অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু পুরো রিপোর্ট পড়লে বোঝা যায় এগুলো মূলত আহমেদ জোবায়ের এবং অন্যদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসায়িক লেনদেনের তথ্য।
এসব দেখে প্রশ্ন জাগে— গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ব্যক্তি মানুষের চরিত্র হননের এই খেলা কি জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও চলবে? অথচ সকল বৈষম্য ও অনৈতিকতার অবসান হবে — এমন চাওয়া নিয়েই তো জুলাই আগস্টে পথে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মানুষ।
বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
সূর্যোদয় | ভোর ৭:১০ পূর্বাহ্ণ |
যোহর | দুপুর ১:০৮ অপরাহ্ণ |
আছর | বিকাল ৪:৩২ অপরাহ্ণ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৭:০৬ অপরাহ্ণ |
এশা | রাত ৮:২১ অপরাহ্ণ |