আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:৩৪
জয়পুরহাট প্রতিনিধি:-জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ভাইরাস জনিত জর সর্দি ও শিশুদের টাইফয়েড জ¦রের প্রকোপ। জ¦র-কাশির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েও তা ভালো হচ্ছে না। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা টাইফয়েড জ¦রের এর বিষয়টি নিশ্চিত করছেন শিশুর অভিভাবকদের। এ অবস্থায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা নিতে জয়পুরহাট হাসপাতালে ভিড় করছেন শিশুদের অভিভাবকরা। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯০ থেকে এক’শ জন শিশু।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে,জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে শিশুদের বেড সংখ্যা মাত্র ২২টি। অথচ এখন প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছে প্রায় একশ শিশু। বেড সংকুলান না হওয়ায় করিডোরের মেঝেতে গাদাগাদি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। অতিরিক্ত রোগীর কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। রোগীর সাথে আসা লোকজনদের ভিড়ে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। অক্টোবর মাসের গত ১১ দিনে জয়পুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৯৮৪ জন শিশু। যাদের মধ্যে টাইফয়েড আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদের বয়স ২ মাস থেকে ১০ বছর। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এক সপ্তাহ ধরে। এক সপ্তাহ পর অধিকাংশ শিশু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছে। তবে ট্যাবলেট অথবা সাসপেনশনে নয় টাইফয়েড আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ্য হচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন নিয়ে। সাত দিন ধরেই ইঞ্জেকশন পুশ করা হচ্ছে শিশুদের শরীরে। চিকিৎসকরা বলছেন ট্যাবলেট ও সিরাপ দিয়ে জ¦র কিছুতেই সারছে না,এমনকি মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করছে না। এক সপ্তাহ ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর ক্রমান্বয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠছে অধিকাংশ শিশুরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে হাসপাতালের চার তলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ শিশুরাই টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি আছে। আবার সর্দি জ¦র এবং নিউমোনিয়ার চিকিৎসা নিতেও কিছু শিশু ভর্তি আছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝে ছাড়িয়ে করিডোরের মেঝে পর্যন্ত ভরপুর এসব রোগীতে। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। এমন কি রাউন্ডে এসেও অত্যন্ত সতর্ককতার সাথে পা ফেলে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে হাসপাতালে কর্তব্যরত নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মো: ইউসুফ আলীকে। তিনি নার্সদের সাথে নিয়ে কখনও দাঁড়িয়ে কখনও হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিশুদের। কর্তব্যরত নার্স জানালেন বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগীর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। রাতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
এ সময় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে কোন সমস্যা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে শহরের শান্তিনগরের জ¦র ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ৩৪ দিন বয়সের শিশু ছোয়াদকে নিয়ে সোমবার রাতে ভর্তি হওয়া মা সুচনা আক্তার নিঝুম বলেন,‘হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড়ে পা ফেলানোর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য কষ্ট হলেও মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছি। করিডোরের বেডে চিকিৎসারত ৯ বছরের শিশু শাহানাকে নিয়ে ৬দিন থেকে চিকিৎসা নেওয়া জয়পুরহাট সদরের সগুনা মহল্লার মঞ্জিলা বেগম বলেন,দুই মাস থেকে মেয়ের জ¦র ভালো হচ্ছে না। এরপর ৬দিন আগে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা প্রতিদিন ২টা করে ইঞ্জেকশন মেয়ের শরীরে পুশ করছে নার্সরা। ডাক্তার বলছেন টাইফয়েড তাই সাড়তে কিছুটা সময় লাগবে। এখন অনেকটা ভালো। জয়পুরহাট পৌরসভার সবুজনগর মহল্লার গৃহবধু তাসমিনা আক্তার বলেন, তার তিন বছর ও নয় বছর বয়সের দুই ছেলে ৫দিন ধরে জ¦রে ভূগছে। প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়েও জ¦র পড়ছে না। সোমবার তিনি শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে গিয়ে পরীক্ষা করার পর তিন বছর বয়সের ছেলে সৌহার্দ্যের টাইফয়েড ধরা পড়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিন ছেলেকে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে। জ¦রে ছেলেরা কিছুই খেতে পারছে না। মাঝে মাঝে পেট ব্যথা বলে কান্নাকাটিও করছে। ওদেরকে নিয়ে খুব বিপদে আছি বলেও তিনি জানিয়েছেন। শহরের ধানমন্ডি এলাকার গৃহবধু সুরাইয়া বেগম জানান তার ছেলে নুসাইবের জর নাছাড়াই পরীক্ষা কওে টাইফয়েড ধরা পড়েছে প্রতিদিন ইনজেকসন দিতে হচ্ছে।অপর দিকে ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাাদিক শামিম কাদিরের টাইফয়েড ধরা পরেছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লাভলী ইয়াসমিন বলেন,এই ওয়ার্ডে ২২জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ সেখানে আমাদের প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ গুন বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা দিতে আমরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি।
হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মো: ইউসুফ আলী বলেন,জয়পুরহাটে ইদানিং টাইফয়েড জ¦রের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। ওরাল অ্যান্টিবায়োটিকে এ জ¦র ভালো হচ্ছে না। এটি পানি ও খাদ্য বাহিত রোগ। এ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। আর বাহিরের খাবার, রাস্তার পাশে রাখা খাবার যথাসাধ্য পরিহার করারও পরামর্শ দেন তিনি।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: সরদার রাশেদ মোবারক বলেন,‘দেড়’শ শয্যার এ হাসপাতালে তিন শতাধিক রোগী সবসময় থাকেই। এখন রোগী বেড়েছে শিশু ওয়ার্ডে। ইদানিং টাইফয়েড জ¦রের প্রকোপ বেড়েছে। পানি বাহিত এ রোগটি পৌরসভার সরবরাহ করা পানি থেকে উৎপত্তি হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে টিম করা হয়েছে। এই টিম নয়টি ওয়ার্ডের পানিই পরীক্ষা করবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এর কারণ আমরা উদঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারব।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |