আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৬:৪৮
ডেস্কঃ-রাশিয়ার সামরিক হামলার তীব্রতা বাড়ায় ইউক্রেন ছাড়তে শুরু করেছেন সেখানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। রাজধানী শহর কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী। এছাড়া উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের শহরগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের নাগরিকসহ বিদেশিদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিবেশী পোল্যান্ড। বাংলাদেশি নাগরিকরা দূতাবাসের সহায়তায় পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারবেন। সেখানে ভিসা ছাড়া ১৫ দিনের জন্য অবস্থানের সুযোগ রয়েছে।এছাড়া রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসও বাংলাদেশিদের গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে যুদ্ধাবস্থায় পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছানোই এখন সবার জন্য চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার হামলা শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশিরা দলে দলে ইউক্রেন ছাড়তে শুরু করে। বেসরকারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করে রাজধানী কিয়েভ শহরে। সেখান থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটারের বেশি। বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় এই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে ট্রেনে কিংবা ট্যাক্সিতে। হাইওয়েতে ব্যাপক যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। ভাড়া বাবদ খরচ করতে হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে। কিয়েভে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা অনেকেই অর্থকষ্টে পড়েছেন। ব্যাংক বন্ধ থাকায় অনেকের কাছে অর্থ থাকলেও তা ক্যাশ করতে পারছে না। এটিএম থেকেও ক্যাশ উত্তোলন করা যাচ্ছে না। কিয়েভ অধ্যয়নরত আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মইন আহমেদ। যুদ্ধ বাধার পর থেকেই ঘুম নেই তার চোখে।
গত দু’রাত ঘুমিয়েছেন মাত্র দু’একঘণ্টা। থেকে থেকে চমকে উঠেছেন তিনি। শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেন ছেড়ে যাবেন কিয়েভ। তাতেও নানা বিপত্তি। বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বারের মতো খাবার খেয়েছেন মইন। হাতে অর্থও সীমিত। শঙ্কা নিয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটছেন অচেনা শহরে। মইন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বলেন, সড়কগুলো ধীরে ধীরে ব্লক হয়ে যাচ্ছে। তাই ভরসা ট্রেন। এই মুহূর্তে মানুষ ভিড় করেছেন রেল স্টেশনে। দুপুর আড়াইটার ট্রেন। এই সকাল বেলাতেই ট্রেনে ওঠার জন্য এসেছেন লাখো মানুষ। সবার মাঝেই উৎকণ্ঠা। ট্যাক্সি করে অনেকেই ছাড়ছেন কিয়েভ। কিন্তু এতে লাগছে ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার। এতো টাকা নেই আমার কাছে। ট্রেনে উঠতে না পারলে বড় বিপদে পড়ে যাবো। সকাল থেকে শহরের খাবার দোকানগুলো বন্ধ। অভুক্ত অধিকাংশই। তিনি বলেন, শহরের সকল ট্রাম, ট্রেন ভাড়াবিহীন করে দিয়েছে সরকার। সকালে স্টেশনে আসার সময় বিকট শব্দ হয়। কিছু একটা থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
অনেক দূরে হলেও শব্দটা এতো বিকট হয় যে, আমরা ভীতির মধ্যে পড়ে যাই। তিনি বলেন, কানায় কানায় পূর্ণ রেলস্টেশন। এতো মানুষ কীভাবে ট্রেনে উঠবো। আদৌ উঠতে পারবো কিনা? আমরা তিন বাংলাদেশি বন্ধু একসঙ্গে আছি। ট্রেনে করে লিবিব শহরে যাবো। শুনেছি এখানে হামলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সকালেই পোল্যান্ডের বর্ডারের দিকে গিয়েছে আমাদের কমিউনিটির কিছু পরিচিত ভাই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যদি তারা সহজেই পোল্যান্ড যেতে পারেন তবে আমরাও সেদিকে যাবো।
মইন আহমেদ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তিনি কিয়েভের যাইতোমার পলিটেকনিক্যাল স্টেট ইউনির্ভাসিটিতে অধ্যয়নরত। এরপর ফের যোগাযোগ করা হয় মইনের সঙ্গে। তখন তিনি ট্রেনে। বলেন, ট্রেনে পা রাখার জায়গা নেই। তারপরও ট্রেনে উঠতে পেরেছি এতেই অনেক খুশি। এখন আমরা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা যাত্রা করবো। খাবার বলতে পানি ও সামান্য হালকা খাবার জুটেছে।
কিয়েভ থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর ওডেসা। সেখানে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এমবিবিএস শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত রিজভী হাসানের সঙ্গে কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপ কলে। রিজভী জানান, ব্ল্যাক সি’র তীরে অবস্থিত ওডেসা শহরটি সামরিক কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত বৃহস্পতিবার সেখানে হামলা হয়েছে। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় বিদেশি নাগরিকরা ওই শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলেও সুপারশপ ও জরুরি পণ্যসামগ্রীর দোকানগুলো খোলা রয়েছে। বাস ও ট্রেন চলাচল করছে। রিজভী জানান, তিনি শুক্রবারই রাতের মধ্যেই ওডেসা ছাড়ার চিন্তা করছেন। পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন তিনি বিভিন্ন স্থানে টিকেটের খোঁজে ছোটাছুটি করছিলেন। রিজভীর সঙ্গে তার পরিচিত আরও ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী পোল্যান্ডের উদ্দেশে শহর ত্যাগ করবেন। তাদের অনেকের কাছেই পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আবার অনেককে বাড়ি ভাড়াসহ পাওনাদারদের হিসাব মিটিয়ে শহর ছাড়তে হবে। গত কয়েক সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেকের হাতে কাজ ছিল না। ফলে আর্থিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
এদিকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে পোল্যান্ড। পোল্যান্ডের ওয়ারশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈধ পাসপোর্টধারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে তাদের পাসপোর্ট দেখিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন। অন্যদিকে যাদের পাসপোর্ট নেই, তারা ট্রাভেল পাস নিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বাংলাদেশিকে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়ারশের বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি দল শনিবার সকালে পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের পথে রওনা হবে। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে ঢুকতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের তারা সহায়তা প্রদান করবেন। ইউক্রেনের ভেতরে বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণ, পেট্রল অপ্রতুলতা ও পথিমধ্যে অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের কারণে এই মুহূর্তে দূরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সীমান্তের দিকে রওনা হতে হলে পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রওনা দিতে অনুরোধ জানিয়েছে ওয়ারশের বাংলাদেশ দূতাবাস।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |