আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১০:০৩
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরী ১৯৮৯-৯৩ সালে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ওই সময় মোজাফফর ও খালেদ তার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের কাছ থেকে মইনুল হোসেন চৌধুরী জিয়া হত্যার যে বিবরণ শোনেন, তা হলো :
মতি, মাহবুব ও খালেদের নেতৃত্বে ২৪ ডিভিশনের কয়েকজন অফিসার জেনারেল মনজুরের অজান্তে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে সার্কিট হাউজ থেকে অপহরণ করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন জিয়াকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়, বিশেষ করে সেনাপ্রধান এরশাদসহ অন্যান্য দুর্নীতিবাজ সামরিক অফিসার এবং পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও অন্য দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসরণ করানো। কারণ, এরশাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হয়রানি নিয়ে জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। সার্কিট হাউজে ঢুকে লে. ক. মতিউর রহমান মাতাল অবস্থায় টলতে টলতে ‘জিয়া কোথায়, জিয়া কোথায়’ বলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে আসেন এবং পলকেই গজখানেক সামনে থেকে স্টেনগানের এক ম্যাগাজিন গুলি জিয়ার ওপর চালিয়ে দেন। উপস্থিত অন্য অফিসাররা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান।
জিয়া হত্যা অপারেশনটি ছিল মাত্র ৯ মিনিটের। ভোর সাড়ে চারটার কিছু পরে মেজর মোজাফফর ফোন করে জেনারেল মনজুরকে জানান, ‘দ্য প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড।’ এটা শুনেই মনজুর চুপচাপ বসে থাকেন কিছুক্ষণ। একটু ধাতস্থ হয়ে মোজাফফরকে বলেন, সব সিনিয়র অফিসার যেন সকাল সাতটায় তাঁর দপ্তরে হাজির থাকে। ২
জিয়ার দাফন
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাঁর লাশ চট্টগ্রাম শহরের বাইরে কোনো এক জায়গায় পুঁতে ফেলা হয়। চট্টগ্রাম সেনানিবাস সরকারের অনুগতদের হাতে চলে যাওয়ার পর লাশটি উদ্ধার করে সেনানিবাসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর শরীরের নানা অংশে যে ক্ষতগুলো তৈরি হয়েছিল, তার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ছিল এ রকম :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি লে. জে. (অব.) জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম, পিএসসি-এর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। দেহ শনাক্তকরণ করেন : রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব লে. কর্নেল মাহফুজ।
মৃত্যুর সময়: ৩০ মে ১৯৮১, ০৪.০০টায়।
ময়নাতদন্তের সময়কাল: পয়লা জুন ১৯৮১, ১০.০০টায় ।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: দুষ্কৃতকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে, শনিবার, ভোর ৪.০০টার সময় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে বলে অভিযোগ আছে। তাঁর শরীরে অনেকগুলো গুলির আঘাতজনিত কারণে ঘটনাস্থলেই মারা যান। লে. কর্নেল মাহফুজের ভাষ্য অনুযায়ী, আরও দুটি মৃতদেহসহ তাঁকে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছে ৩০ মে ১৯৮১ আনুমানিক বেলা আড়াইটায় কবর দেয়া হয়। চট্টগ্রাম স্টেশন হেডকোয়ার্টারের লোকদের নিয়ে লে. কর্নেল মাহফুজ পয়লা জুন ১৯৮১ সকালে তাঁর মরদেহ কবর থেকে তুলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসেন। সেখানে পয়লা জুন ১৯৮১ বেলা দশটায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
পরীক্ষা করে যা পাওয়া গেছে : দেহে আংশিকভাবে পচন ধরলেও তার কাঠামো ঠিক থাকায় এটা যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ, তা শনাক্ত হয়েছে। তাঁর দেহে গুলির প্রায় বিশটি ক্ষত ছিল। এগুলো হলো : ক. ডান চোখের ভেতর দিয়ে একটা গুলি ঢুকে বাঁ কানের পেছনে
খুলি ভেদ করে ঘিলুসহ বেরিয়ে গেছে।
খ. মুখের বাঁ দিক থেকে গলার নিচের বাঁ অংশে ৪”x ৩” ক্ষত তৈরি হওয়ায় চোয়াল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
গ. বুকে ও পেটে গুলির প্রায় দশটি ক্ষত ছিল।
ঘ. সমসংখ্যক গুলি মেরুদণ্ড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আরও বড় ক্ষত তৈরি করেছে।
ঙ. কোমর ও বাম ঊরুসন্ধির মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে গুলি দেহের পেছন দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ৪” x ৩” ক্ষত তৈরি হয়েছে।
সম্ভবত ব্রাশফায়ারের কারণে এটা হয়েছে।
চ. ডান হাতে গুলির দুটি ক্ষত ছিল।
ছ. পায়ে গুলিজনিত বিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষত পাওয়া গেছে।
মরদেহ পরিষ্কার করে জোড়া দেওয়া হয়। সব ক্ষতে এবং দেহে তরল ফরমালিন দেওয়া হয়। নরম তুলা দিয়ে দেহ ব্যান্ডেজ করা হয় । নতুন সাদা কাপড়ে দেহ মুড়ে দেওয়া হয়। কাপড়ের ওপর সিডার অয়েল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল ও আতর ছিটিয়ে চা-পাতাসহযোগে কফিনে রাখা হয়। জাতীয় মান বজায় রেখে কফিনটি মুড়ে তারপর ব্রিগেডিয়ার এ কে এম আজিজুল ইসলাম, লে. কর্নেল মাহফুজ ও লে. কর্নেল মাহবুবুল ইসলামের কাছে বেলা একটায় কফিনটি হস্তান্তর করেন চট্টগ্রাম সিএমএইচের সিও।
স্বাক্ষর/লে. কর্নেল এ জেড তোফায়েল আহমেদ, প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ
জিয়াউর রহমানের কফিনটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা। জাতীয় সংসদসংলগ্ন ক্রিসেন্ট লেকের উত্তরের খোলা চত্বরে কফিনটি সমাধিস্থ করা হয়। এর কিছুদিন পর চট্টগ্রামে ‘সেনা বিদ্রোহে’র বিচার শুরু হয়।
(মহিউদ্দিন আহমদের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ বই থেকে নেয়া)–সূত্র:মানবজমিন ।।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |