শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের হারিয়েই দিল তারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত ২০ বছরে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। নিজেদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অসাধারণ পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়লো টাইগাররা।
সেঞ্চুরিয়ানে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের পাড়ার দল বানিয়ে ৯ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে সেঞ্চুরিয়ানে ৩৮ রানে জিতে ম্যাচ জেতার ইতিহাস নতুন করে লেখে টাইগাররা। ২য় ম্যাচে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আজকের সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাট করা দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাসকিনের বোলিং তোপে মাত্র ১৫৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৬ ওভার ৩ বলে ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। অধিনায়ক তামিম ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
একই মাঠে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিল লাল-সবুজের দল। তবে জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় দিয়ে সমতায় ফিরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বুধবার কাগিসো রাবাদার উইকেট নেয়ার পর ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান বলে ওঠেন ‘ম্যাগনিফিসেন্ট, ব্রিলিয়ান্ট, আউটস্ট্যান্ডিং!’ তাসকিন আহমেদকে বিশেষায়িত করার জন্য আতহার আলীকে যদি তখন আরও বলার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে হয়তো নিজ অভিধানের সব শব্দই ব্যবহার করতেন তিনি! দক্ষিণ আফ্রিকার নিজ দুর্গ সেঞ্চুরিয়নে বল হাতে যে পারফরম্যান্স দেখালেন তাসকিন, তাতে আতহার নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই প্রশংসার দাবিদার তিনি। তাসকিনের ১০ ওভারের কোটা পূর্ণ করার আগেই শেষ হয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। তার বোলিং ফিগার ৯-০-৩৫-৫। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে ৩৭ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাদের দলীয় সর্বনিম্ন্ন ইনিংস এটি। ২০১৫তে মিরপুরে ১৬২ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্যারিয়ারে এর আগেও একবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ২০১৪তে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ওয়ানডেতে। তবে বিদেশের মাটিতে এবারই প্রথম নিলেন ৫ উইকেট। আইপিএল-এ খেলার সুযোগ পেয়েও ভারতে যাননি দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে। তাসকিন দেখালেন তার নিবেদন কতটুকু। ইনিংস বিরতির সময় মাইক্রোফোনে তিনি বলেন, ‘পারফরম্যান্স নিয়ে খুবই খুশি। নিজের পরিকল্পনা মাফিক চেষ্টা করে গেছি। উইকেট থেকেও কিছুটা বাউন্স পেয়েছি। চেষ্টা করেছিলাম লাইন-লেন্থ বজায় রেখে খানিকটা বৈচিত্র্য আনতে। আমি এ পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। গত দেড় বছর ধরে এভাবেই কাজ করছি। আমার সাফল্যের চাবি এটাই।’ বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। আগের সেরা এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মেহেদী হাসান মিরাজের ৬১ রানে ৪ উইকেট। ২০১২ সালের পর প্রথম বোলার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেলেন তাসকিন। সর্বশেষ ২০১২ সালে পার্লে ৫ উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা।
অভিষেকের পর এ নিয়ে ৪৮টি ওয়ানডে খেললেন তাসকিন, উইকেট ৬৭টি। এর আগে বিদেশে তার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭ রানে ৪ উইকেট। এশিয়ার বাইরে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচে ৩টি করে উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩ রানে ৩টি এবং ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও ৩ উইকেট নেন। যদিও ওই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন থমকে যায় বাংলাদেশের। আর চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে তাসকিন পান ৩ উইকেট।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এ পেসার। তৃতীয় ম্যাচেও প্রথম তিন ব্যাটারের দু’জনকে সাজঘরে ফেরান তিনি। নিজের পরপর দুই ওভারে কাইল ভেরাইনা ও ইয়ানেমান মালানের উইকেট তুলে নেন। এরপর তার শিকারে পরিণত হন ডেভিড মিলার। একই ওভারে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও কাগিসো রাবাদাকে আউট করে তাসকিন পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। তার ৫ উইকেটের চারটিই এসেছে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমের ক্যাচ হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে এত ক্যাচ আগে কখনও নেননি বাংলাদেশের কোনো কিপার।
তবে সতীর্থ বোলারদের থেকেও ভালো সাপোর্ট পেয়েছেন তাসকিন। অন্য প্রান্তে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, শরীফুল ইসলামরা চাপে রেখেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। সাকিবের শিকার ২ উইকেট। শরীফুল ও মিরাজ নিয়েছেন একটি করে। এদিন উইকেটের পেছনে ২০০ ক্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মুশফিকুর রহীম। ৫০টি স্টাম্পিংয়ে ওয়ানডের সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে ২৫০ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়লেন তিনি।