আজ সোমবার | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৮:৫২
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ক্ষমতাসীনদের ‘সিন্ডিকেট’ই দায়ী অভিযোগ করে এর ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পাঁচ ঘন্টার এই গণঅনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানান।
অনশনের সূচনাতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকের পত্রিকায় আছে, চাল, ডাল, তেল, আটা, সবজীসহ সমস্ত জিনিসের যেহারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যা এখন মানুষের সহ্যের বাইরে চলে গেছে।এর মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহভাবে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এই অনির্বাচিত সরকারকে যদি পরাজিত করতে না পারি, তাদেরকে যদি ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারি তাহলে এদেশের মানুষের অস্তিত্ব থাকবে না।”
‘‘ আসুন আমরা আজকে এই গণঅনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে প্রতিবাদ তা দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এই গণঅনশনের পালন করে এই সরকারকে জানিয়ে দেন যে, তোমাদের প্রতি জনগনের কোনো আস্থা নেই। ব্যর্থতায় দায় স্বীকার করে আপনারা সরে যান, ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে এই অনশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। বিকাল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসনকে পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ, লিফলেট বিতরনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা জেলায় প্রতীক অনশনের কর্মসূচি করেছে তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাত ও রাস্তায় পলিথিন ও মাদুর বিছিয়ে এই অনশনে অংশ নেয়। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে গণঅনশন সমাবেশে পরিণত হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ সব কথার এক কথা সরকারের পদত্যাগ, সবার একথা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই লক্ষ্যেই আমাদের মধ্যে বিভেদ নেই।”
‘‘ এখন জাতীয় সরকার-কেউ আগে কেউ পরে। এই তর্কেরও বোধহয় প্রয়োজন নাই। কারণ এই সরকারকে বিতাড়িত করি। হাসিনা সরকারকে দাফন না করতে পারলে সরাতে না যে ধরনের সরকারই চান তা হবে না। না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পতন ঠিক করি, তারপরে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করি, তারপরে দেশটা মেরামত করি…।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘‘ লৈগি-বৈঠা আমাদের অস্ত্র নয়। এই অস্ত্রের প্রয়োজন আছে আজকে যারা সরকার চালায়। আমাদের অস্ত্র লৈগি-বৈঠা নয়।
‘‘ বিএনপির অস্ত্র হচ্ছে জনগন। এই জনগনকে নিয়ে আমরা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশে জনগনের সরকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবো। ”
পাঁচ ঘন্টা অনশন কর্মসূচিতে শতাধিক নেতার বক্তব্যের কারণে বিকাল তিনটা বেজে যাওয়া সমাপনীতে বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য বক্তব্য না দিয়ে অনশনের সমাপ্তি টানেন।
‘ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন কেনো’
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এটা সত্যি যে জিনিসপত্রের দাম এতো বেড়েছে যে, মানুষ বেকুব হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুইদিন আগে সংসদে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য জনগনের সহ্যের মধ্যে আছে। বুঝেন। ১০ টাকা চাল খাওয়ানোর কথা ছিলো সেই চালের দাম আজকে ৭০ টাকা।”
‘‘ তারপরেও লজ্জা নাই। বলে কিনা এমন কোনো দাম বাড়ে নাই, মানুষের টাকা আছে কেনার ক্ষমতা বেড়েছে, তিন গুন ক্ষমতা বেড়েছে যে মানুষ কিনে কিনে খেতে পারে। মানুষের কেনার ক্ষমতা যদি বাড়ে তাহলে বাজার করবার জন্য কলকাতা যায়, দিল্লী যায়, ব্যাংকক যায়, সিঙ্গাপুর যায়। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দেয় না। তারপরেও এক মন্ত্রী বলেন যে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তিনগুন বেড়েছে। ও একটা মূর্খ বেয়াদব।”
তিনি বলেন, ‘‘একটাই কাজ করতে হবে, এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে সরকার যাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং পালাবার কোনো পথ না পায়। আমি বলি, মানুষ আপনাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আরো যদি সোজা সাপ্টা বলি, মানুষ বিএনপির দিকে তাঁকিয়ে আছে।আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করছি ১৭ কোটি মানুষ আপনাদের পেছনে সেই দল সরকারের নির্দেশের অপেক্ষার আর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ওরা অনুমতি দেবে না, আমি অনুমতি চাইও না।”
‘‘ আমি যদি জনগনের জন্য আন্দোলন করি, ন্যায্য আন্দোলন করি মানুষের কাছে যাবো, মানুষের সাথে বসব, তার সাথে কথা বলব। ডাক দেবো আপনাদের, সারা বাংলাদেশ বন্ধ হয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে ওদের ক্ষমতার আস্ফালন, ওদের ক্ষমতার লাঠি ঘুরানোও বন্ধ হবে, ক্ষমতার দাপট দেখানো বন্ধ হবে, পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।”
এজন্য সকল গণতান্ত্রিক দলগুলোকে এক হয়ে সরকার পদত্যাগের আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহবানও জানান মান্না।
মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের লিটন মাহুমদের সঞ্চালনায় গণঅনশনে বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আনিসুর রহমান তালুদকার খোকন, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান বক্তব্য রাখেন।
মহানগরের ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, তাঁতী দলের মজিবুর রহমান, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের ফজলুল রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
এই গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে বক্ততৃা করেন জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের নুরুল ইসলাম বুলবুল, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমূখ নেতারা।
এই অনশন কর্মসূচি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:07 PM |
Asr | 3:11 PM |
Magrib | 5:32 PM |
Isha | 6:51 PM |