আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৯:৩৭
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক উভয় পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট, কাঁচাবাজার ও ফলের দোকান। নেপথ্যে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার মহাসড়কের এক-তৃতীয়াংশ ফুটপাত দখল করে প্রভাবশালী সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা, হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ। তাদের হাত করে কোটি টাকার চাঁদাবাজির হাট বসিয়েছেন এক শ্রেনীর সুবিধা ভোগী। যার ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে মানুসের জটলা । এতে করে মহাসড়কে দীর্ঘ হচ্চে যানজটের সাড়ি , চরম ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীসাধারণসহ পথচারীরা। বাড়ছে দূর্ঘটনাও আর পথ চলায় নেই কোনো স্বস্তি, বেড়েই চলেছে বিড়ম্বনা। শিল্পাঞ্চলবাসীর জন্য এ বিচিত্র অভিজ্ঞতা একদিনের নয়, প্রতিদিনের।
সরেজমিনে ঘুরে এবং প্রত্যেক্ষদর্শীদের তথ্য মোতাবেক জানাযায়, আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, পল্লীবিদ্যৎ বাসস্ট্যান্ড, সম্ভার পাম্প, নতুন ইপিজেড ও বলিভদ্র বাজার, শ্রীপুর বাস ষ্ট্যান্ড, নবী টেক্সটাইল বাস ষ্ট্যান্ড,জিরানী বাস ষ্ট্যান্ড, এ সকল এলাকার ফুটপাতের প্রায় ১৮শ থেকে ২ হাজার দোকান রয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী-বাইপাইল-ইপিজেড সড়কের ইউনিয়ক ও জামগড়া এলাকায় রয়েছে আরও প্রায় ৫শ থেকে ৭শ দোকান ঘর। যার প্রত্যেক দোকান হতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। গড়ে ২০০ টাকা ধরলে দিনে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। সেই হিসেবে মাসে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে আশুলিয়ার এই সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৮-১০ টি স্থানে। লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করা হলেও এর সিকি অংশও সরকারের কোষাগারে যায় না। ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক হকারকেই ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন অগ্রিম দিতে হচ্ছে। নবীনগর এলাকার তিন শতাধিক দোকানের চাঁদার টাকা তুলেন মাসুদ, মিজান ও রানা নামের তিন জন। যারা প্রতিটি দোকান থেকে ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেন। বলিভদ্র এলাকার আনবিকের সামনের শতাধিক দোকান থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নেন রিপন ও কামাল নামের দুইজন। যারা ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি লতিফ মন্ডলের লোক বলে জানা যায়। ডিইপিজেডের পুরতান জোন এলাকা হতে বলিভদ্র বাজার পর্যন্ত তিন শতাধিক দোকান দেখাশোনা করে আতিক ও জাহাঙ্গীর নামের দুইজন। তারাও লতিফ মন্ডলের লোক বলে জানা যায়। এখানে টাকার তুলার দায়িত্বে রয়েছেন শামসুর নাহার নামের এক মহিলা। যিনি প্রতি দোকান হতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। অন্যদিকে আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে সম্ভার পাম্প পর্যন্ত টাকা তুলেন সংবাদকর্মী পরিচয়ে বাবুল আহম্মেদ যার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় চাঁদাবজির মামলা হয়েছে। এছাড়াও সম্ভার পাম্প হতে ডিইপিজেডের পুরাতন শাখা পর্যন্ত টাকা তুলেন আওয়াল, রাজু ও জাকির নামের তিনজন। যারা সবাই স্থানীয় প্রভাবশালী ওমর আলীর লোক বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার জানান, চাঁদার টাকা না দিলে দোকান রাখা অসম্ভব। শুধু চাঁদার টাকা নয়, বসার জন্য তাদেরকে এককালীন অগ্রিম টাকাও দিতে হয়। প্রথমে লাইনম্যানরা টাকা তুলে পরে তা ভাগাভাগি করে। তবে টাকার বড় অংশই চলে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে। এখানে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতারা তাদের ঘনিষ্ঠদেরকে লাইনম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। নাম না প্রকাশ করা শর্তে পল্লীবিদ্যুৎ বাস ষ্ট্যান্ডের কয়েকজন হকার বলেন, এই স্থান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা চাদাঁ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা দুদু মন্ডলের ধর্ম ছেলে সিহাবের নেতৃত্বে ফলের দোকানদার মিজান ও চা দোকানদার ওয়াহেদ প্রতিদিন চাদাঁর টাকা উত্তোলন করে। তারা আরোও বলেন, এই চাদার টাকা নেতারাই ভাগ করেন না কারন ফটপাত চালাতে হলে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার, হাইওয়ে পুলিশ ৫০ হাজার টাকা, থানা পুলিশ ৫০ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাতে দিতে হয় নতুবা আমরা গরীবরা ক্ষতির স্বীকার হই কিন্তু যারা এই চাঁদার অংশিদার হয় তাদের কোন ক্ষতি হয়না। এভাবেই চলে আসছে প্রত্যেকটি ফুটপাত স্পট থেকে চাঁদাবাজির ভাগাভাগি। আরোও গোপন তথ্য বের হয়ে আসে, এসব চাঁদাবাজিকে বৈধ করার জন্য আশুলিয়া থানা পুলিশ, সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং সড়ক ও জনপদের কর্মীরা দুপুরে ফুটপাত লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে খালি করলেও তারা চলে যাওয়ার পর হকারদের আবার বসিয়ে দেয়া হয়। বিক্রি না হলেও চাঁদা দেয়া থেকে তাদের কোনো ছাড় নেই। হকাররা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সেখান থেকে তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়া হয় নতুন কোনো হকারকে। তাদের কাছ থেকেও জামানতসহ নেয়া হয় নিয়মিত চাঁদা। সংবাদকর্মী পরিচয়ে তথ্য জানতে চাইলে অধিকাংশ হকার চাঁদা দেওয়ার কথা অস্বীকার করার কারণ হলো এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে কয়েক দিন পুলিশের উৎপাত দোকান বসানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে।
হাইওয়ে থানা পুলিশের ফুটপাত থেকে চাদাঁর ভাগ গ্রহনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে এটা একটা গুরুতর অভিযোগ। আমি আজ বিকেলেই ফুটপাত অভিযানে পাঠাবো এবং উচ্ছেদ করবো। তিনি আরোও বলেন, আমার সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়াসহ তিন থানা দেখতে হয়। এই অঞ্চলে এতো ফুটপাত স্পট হয়েছে যে আমার লোকবল দিয়ে প্রতিদিন অভিযান চালানো সম্ভব হয়না কারন এখন ভেঙ্গে দিলে ঘন্টা খানেক পরে আবারো ফুটপাত চালু হয়ে যায়।
থানা পুলিশের ফুটপাত থেকে চাদাঁর ভাগ গ্রহনের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার হাইওয়ে ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি আমি জানিনা আপননি আমাকে জানিয়েছেন বিষযটি গোপনে তদন্ত করে দেখবে।
ফুটপাত থেকে চাদাঁর ভাগ গ্রহনের বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রোকৌশলী নাজমুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।
সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফুটপাতে চাঁদাবাজির নেপথ্যের প্রভাবশালী মহলকে নিবৃত করবে কে? যেখানে জড়িত লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য? এভাবে কি আর আশুলিয়ার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে? প্রভাবশালী নেতারা ও প্রসাশন যদি জনস্বার্থে আর সমাজের স্বার্থে সঠিক পথ অনুসরন করে তবেই অবৈধ টাকা কারো পকেট ভারি করবেনা। তাহলে দেশ, সমাজ আর জনগন বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড, মাদক সেবন আর বিভিন্ন কলহ থেকে মুক্তি পাবে।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:30 PM |
Isha | 6:50 PM |