- প্রচ্ছদ
-
- রংপুর
- কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় লটারির প্রকাশিত ফল ‘বদলে দিলেন’ পিআইও
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় লটারির প্রকাশিত ফল ‘বদলে দিলেন’ পিআইও
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল, ২০২২ ৪:৫৭ অপরাহ্ণ
রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি #কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধে দরপত্রের প্রকাশিত লটারির ফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীন ‘গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু-কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের দরপত্রের প্রকাশিত লটারির ফল বদলে নিজ অফিসের কার্য-সহকারীর ভাইকে কাজ দিয়েছেন পিআইও। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ঠিকাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ‘গ্রামীণ রাস্তার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু-কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে উলিপুর উপজেলায় পাঁচটি গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ হলরুমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসব দরপত্রের প্রকাশ্য লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও, উলিপুর পৌর মেয়র, উপজেলা প্রকৌশলী, ভাইস চেয়ারম্যান ও পিআইওসহ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লটারিতে পাঁচটি গ্রুপে বিজয়ী ঠিকাদার নির্বাচিত হন। এ সময় ১ নম্বর গ্রুপের কাজটি পান কম্পারেটিভ স্টেটমেন্ট (সিএস) তালিকার ১৫৯ নম্বর ক্রমিকের মেসার্স অর্ক ট্রেডার্স। কিন্তু লটারির পর অর্ক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবু বক্কার সিদ্দিক পিআইও সিরাজুদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করে কাজের প্রক্রিয়া অগ্রগামী করতে গেলে টালবাহানা শুরু করেন। লটারির দুই সপ্তাহ পর পিআইও ঠিকাদারকে জানান, ‘কাজটি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। লটারিতে আসলে ১৫৯ নয় ১৬৯ নম্বর ক্রমিক উঠেছে। কাজটির জন্য একজনের কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছি। বিষয়টি মেটাতে ইউএনও এবং সাংবাদিকদের চার লাখ টাকা দিতে হয়েছে। বাকি চার লাখের আমার জন্য দুই লাখ রেখে আপনি দুই লাখ নিয়ে যান।’
অভিযাগপত্রে ভুক্তভোগী ঠিকাদার দাবি করেছেন, এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পিআইও কাজ বাতিলের হুমকি দেন এবং বিজয়ী ঠিকাদারের তালিকা বদলে অর্ক ট্রেডার্সের ক্রমিকের স্থলে মা এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের ক্রমিক বসিয়ে নতুন তালিকা তৈরি করেন। মা এন্টারপ্রাইজের মালিক আশিকুর রহমান পিআইও অফিসের কার্য-সহকারী আনিছুর রহমান মুকুলের ছোট ভাই।
অভিযোগকারী ঠিকাদার আবু বক্কার বলেন, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পিআইও লটারির প্রকাশিত ফল পরিবর্তন করেছেন। তিনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফল সিটে শুধু ক্রমিক নম্বর বসিয়েছেন। কিন্তু বিজয়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম লেখেননি; যা বিধিবহির্ভূত। সিএস এবং ফল সিটে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং অপর আরও এক সদস্যের স্বাক্ষর নেই।
তিনি বলেন, পিআইও নিজে ব্যবসা করার উদ্দেশে নিজ অফিসের কর্মচারীর ভাইকে বিজয়ী দেখিয়েছেন। লটারির দিন হল রুমে উপস্থিত সব ঠিকাদার সাক্ষী দিচ্ছেন লটারিতে অর্ক ট্রেডার্স বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু পিআইও সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লটারি ফল পরিবর্তন করেছেন। আমি এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
জানতে চাইলে টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা প্রকৌশলী সাদেকুল আলম বলেন, ‘ওই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে আমি আহ্বায়ক কিনা জানি না। আমি সিএস কিংবা ফল সিটে কোনও স্বাক্ষর করিনি।’ এ ব্যাপারে পিআইও সিরাজুদ্দৌলার সঙ্গে কথা বলা পরামর্শ দেন সাদেকুল আলম।
জানতে চাইলে পিআইও সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ‘ঠিকাদারের অভিযোগ সঠিক নয়। তার নাম লটারিতে ওঠেনি। টাকা লেনদেনের অভিযোগও সঠিক নয়।’
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়কের স্বাক্ষর ছাড়া সিএস তৈরি এবং লটারির ফল সিট তৈরি বৈধ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি পিআইও।
ফল সিটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম না লেখা এবং কমিটির সদস্যদের পদবি ভুল লেখার বিষয়টি স্বীকার করে পিআইও বলেন, ‘এটা আমার ভুল হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার দরপত্রের লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘২৬ মার্চের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে ইউএনও বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতিতে লটারি হলেও সেদিন লটারি সংক্রান্ত কোনও কাগজে স্বাক্ষর করিনি।’
লটারিতে উপস্থিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হক বলেন, সেদিন ১ নম্বর গ্রুপের কাজটি পান কম্পারেটিভ স্টেটমেন্ট (সিএস) তালিকার ১৫৯ নম্বর ক্রমিকের মেসার্স অর্ক ট্রেডার্স। পিআইও কেন ১৫৯ নম্বর ক্রমিক বদলে এমন কাজ করলেন তা আমার বুঝে আসছে না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অভিযোগকারী ঠিকাদার বলছেন, ইউএনও এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়কসহ উপস্থিত সদস্যরা লটারির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমিক নম্বর ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম চিহ্নিত করে স্বাক্ষর করলে পিআইও এভাবে জালিয়াতি করার সুযোগ পেতেন না।
Please follow and like us:
20 20