আজ বৃহস্পতিবার | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:২৯
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নাহিদ ও মোরসালিনের ওপর হামলাকারীদের বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে অন্তত চারজনের বিস্তারিত পরিচয় মিলেছে। তারা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া মাথায় হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেয়া আরও বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত অস্ত্রধারী কাউকে গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ হয়নি। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে চিহ্নিত কয়েকজন হেফাজতে রয়েছে। বাকিরা তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার বা আটকের তথ্য না দেয়ায় হামলাকারী অস্ত্রধারীরা কোথায় আছে এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা পালিয়ে গেছে কিনা এ প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
কুরিয়ার কর্মী নাহিদকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিওটি সারা দেশে ভাইরাল হওয়ার পর হামলাকারীদের কয়েকজনের ছবি প্রকাশ্যে আসে। নাহিদকে ছোরা দিয়ে আঘাত করা তরুণের পরিচয় হিসেবে জাকিরসহ কয়েকটি নাম এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। হামলায় কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা ওই তরুণের নাম ইমন। ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমনের গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলায়। তিনি কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে থাকেন।
ইমন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সামাদ আজাদ জুলফিকারের অনুসারী। ইমন ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী। ইমন কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয়। তার মোবাইল ফোন বন্ধ ও ফেসবুক আইডি লক রয়েছে। নাহিদকে পিটিয়ে আহত করা রাব্বী ঢাকা কলেজের নর্থ হলে থাকেন। রাব্বী ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। রাব্বী ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী বরিশাল অঞ্চলের শিক্ষার্থী জুলফিকার গ্রুপের অনুসারী। এ ছাড়াও নাহিদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত কাইয়ুম ও সুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।এর বাইরে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ২৯ জন হেলমেটধারীকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু পরের দিন সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে ব্যবসায়ীরা হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছেন। ৭ জন সাংবাদিক উভয়পক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় মোট ৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত দু’জনের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। ২টি মামলার তদন্তের ভার পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় বিএনপি’র নেতা মকবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় একমাত্র আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে নিউ মার্কেট থানার বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এডভোকেট মকবুল হোসেন।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের হোস্টেল থেকে জাহিদ হোসেন জুয়েল নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। ওই শিক্ষার্থীর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. একেএম হাফিজ আক্তার রাসেল গতকাল মানবজমিনকে জানান, নিউ মার্কেটের ঘটনায় মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নীল রঙের মাঝে সাদা চেকের টি-শার্ট পরে সংঘর্ষে নাহিদকে হামলা করে কাইয়ুম। তার হাতে ছিল রড। মাথায় হেলমেট না থাকায় কাইয়ুমকে সহজেই চিহ্নিত করতে পেরেছে ডিবি পুলিশ। কাইয়ুম নর্থ সাউথ হলে থাকেন। কাইয়ুম ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী জসিমের অনুসারী। জসিমের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়।
সূত্র জানায়, হলুদ হেলমেট ও লাল গেঞ্জি পরা সুজন ইসলাম নাহিদকে ইটের আঘাত ও লাথি মেরে আহত করেন। পরে ইমন নাহিদকে কোপানো শুরু করলে সুজন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। সুজন ঢাকা কলেজের ২০১৩-২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। সুজন ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী জুলফিকার গ্রুপের অনুসারী। সুজন ইলিয়াস হলে থাকে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, লাল হেলমেট পরিহিত রাব্বী নামে আরেকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। রাব্বী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। রাব্বী নর্থ সাউথ হলে থাকে। সে জসিম গ্রুপের অনুসারী বলে জানা গেছে। ডিবি জানায়, এ ছাড়াও ওই ঘটনায় সুমন, আজিজ, রাসেল, শারাফাত, শমসের ও রিফাত নামে মোট ২৯ জন হেলমেটধারীকে চিহ্নিত করা গেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা সবাই কলেজের হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র বলে জানা গেছে। তাদের অনেকেই ছাত্রলীগ কর্মী।
সূত্র জানায়, অনেক আসামি এখন ঢাকা কলেজের হোস্টেলে অবস্থান করলেও কৌশলগত কারণে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। যারা হামলায় অংশ নিয়েছে তারা এখন হলকেই নিরাপদ মনে করছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, বাইরে গেলেই গ্রেপ্তার হতে পারে। এ জন্য তারা হল ছেড়ে কোথায় যায়নি। তবে কিছু আসামি হলের বাইরে চলে গেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ওই দিনের হামলায় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ মাঠে নেমেছিল। তাদের অনেকের কাছেই ছিল ধারালো দেশীয় অস্ত্র, লাঠি ও রড। পরিচয় আড়াল করতে অধিকাংশের মাথায় ছিল হেলমেট পরিধান করেছিল। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিহ্নিত করতে না পারে। এ ছাড়াও তাদের হাতে যে সব ধারালো অস্ত্র দেখা গিয়েছিল তা ঢাকা কলেজের হল থেকে এসেছিল বলে জানা গেছে। যখনই ঢাকা কলেজের অভ্যন্তরীণ কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হট্টগোল হয় তখনই ওইসব অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। এখনো ওই সব ধারালো অস্ত্র অস্ত্রধারীরা সেখানে মজুত করে রেখেছে বলে ঢাকা কলেজের সাধারণ ছাত্র সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল রবিবার নিউ মার্কেটের দোকানকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়েছে। রোববার বিকালের এই অভিযানে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক জানান, অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করা হয়েছিল। তবে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্র:মানবজমিন
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:08 PM |
Asr | 3:13 PM |
Magrib | 5:34 PM |
Isha | 6:53 PM |