আজ সোমবার | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:০৬
বিডি দিনকাল ডেস্ক: বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার অনুমতি না মেলার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের বিদেশ গমন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ এক ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর সংকটে উপনীত হয়েছেন গোটা দেশের জনগণ। নিশিরাতের মাফিয়া সরকার এদেশের আইন-আদালত-বিচার-আচার-প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণের ঘনকালো আলখেল্লায় ঢেকে দিয়েছে। আদিম বন্য শাসন চলছে দেশের প্রতিটি সেক্টরে। এখন ক্ষমতাসীনদের ভ্রষ্টাচারের প্রলয় নৃত্য চলছে চারদিকে। দেশে চলছে দুই আইন। আইন ও বিচারের চোখ কানা করে দিয়েছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। মুজিব কোটধারী আওয়ামী লীগার ও প্রধানমন্ত্রীর ছত্রছায়া প্রাপ্তরা দেশের সকল আইন কানুনের উর্ধ্বে। হীরক রাণীর দেশে তাদের জন্য সাত খুন মাফ। আর বিএনপি এবং বিরোধী দল ও মতের মানুষের জন্য প্রতিহিংসামুলক ও গণভবনের ওহি দিয়ে চলছে বিচারিক সিদ্ধান্ত। বিএনপির জন্য আদালতগুলোকে ক্যাঙ্গারু কোর্টে পরিণত করা হয়েছে। বিচারালয়গুলোকে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণের মেশিনে পরিণত করা হয়েছে। এটা এখন শেখ হাসিনার তথাকথিত ন্যায় বিচারের নতুন মডেল। ক্ষমতাসীনরা হচ্ছে দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক। তাদের জন্য দেশের কোনো আইন আদালত প্রযোজ্য নয়। বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক-তারা আওয়ামী লীগের কৃপায় তাদের প্রজা হয়ে বসবাস করছে। আওয়ামী সীলমোহর গায়ে থাকলে ফাঁসির আসামিও নিষ্পাপ হয়ে যায়।
আপনারা নিশ্চয়ই অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেছেন, দুর্নীতির মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী, যার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, বুড়িগঙ্গা দখলসহ গডফাদারের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হাজী সেলিম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সগৌরবে বীরদর্পে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে থাইল্যান্ড চলে গেছেন। দুর্নীতির মামলায় হাজী সেলিম আত্মসমর্পণ না করেই দেশ ছেড়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে জানিয়েছেন, কয়দিন আগে হাজী সেলিম তার অফিসে যেয়ে দেখা করেছিলেন। হাজী সেলিমের আগেও এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি, জয়নুল হক সিকদারের সন্ত্রাসী দুই ছেলে সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার রোগী সেজে ২০২০ সালের ২৫ মে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংকক যান। বিষয়টি তখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। নিজেদের মালিকানাধীন আরঅ্যান্ডআর এভিয়েশনের একটি উড়োজাহাজকে “রোগীবাহী” হিসেবে দেখিয়ে পুলিশের তালিকায় ওয়ান্টেড ব্যাংক পাড়ার ত্রাস দুই ভাই সরকারের ওপর মহলের অনুমোদন নিয়েই দেশ ছাড়েন। আবার কিছুদিন পর রন হক সিকদার যখন দেশে আসেন তখন বিমানবন্দর থেকে আটক নাটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরকারের হাইকমান্ডের “মমতায়” তার জামিন হয়ে যায়।
অথচ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশনেত্রী, চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে কথিত দুর্নীতির মিথ্যে মামলায় বন্দী রেখে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঠেলে দেয়ার পরও বিদেশে তাঁর চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড এবং তাঁর পরিবার বারবার আবেদন নিবেদন করলেও বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিরা দেশনেত্রীকে নিয়ে উপহাস কটাক্ষের ধারাবর্ষণ থেমে নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বাধা দেয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নানা কারসাজী করে থাকেন। আর হাজী সেলিম বা রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদাররা কোন অনুমতি না নিয়েই সরকারের প্রশ্রয়ে বিদেশ চলে যান, তখন আনিসুল হক নিশ্চুপ। শেখ হাসিনা আবারো প্রমাণ করলেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রেখেছেন। তাঁকে তিলে তিলে নিঃশেষ করতেই বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য যেতে দেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি না দিলে এই নিশিরাতের মিথ্যাবাদী সরকারকে আর ছাড় দিবে না জনগণ।
সচেতন সাংবাদিগণ/
যতবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার ও মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন, ততবার আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা তারস্বরে চিৎকার করে বলেছেন, দন্ডিত আসামির দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। অথচ হাজি সেলিমের জন্য সেই সুযোগ কীভাবে হলো ? হাজি সেলিমের আইনজীবীর ভাষ্যমতে, তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বিদেশে গিয়েছেন। নিশিরাতের বিনাভোটের বিতর্কিত আওয়ামী লীগের একজন এমপি যে সুবিধা পেতে পারেন, সর্বাধিক ভোটে বার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনী সেই সুযোগ পান না। আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তাহলে কোন আইনে সাজাপ্রাপ্ত হাজী সেলিম চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেলেন ? এখানে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এক আইন আর হাজি সেলিমের জন্য অন্য আইন কোন সংবিধানে, কোন গ্রন্থে আছে ? আহারে আইনের শাসন! দেশনেত্রীর নামে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার ঘটনা দেশে-বিদেশে সকলেই অবগত। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনেও তা সুষ্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা জানেন, ১৪ বছর আগে বিচারিক আদালতে হাজি সেলিম দন্ডিত হলেও এখন পর্যন্ত একদিনও জেল খাটতে হয়নি। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে জোর করে জেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বহু অপকর্মের হোতা হাজি সেলিমের মামলাটি হলো অবৈধ সম্পদ অর্জনের যা সুষ্পষ্ট সত্য ঘটনা। নি¤œ আদালত হাজী সেলিমকে ১৩ বছর কারাদন্ড দিলেও উচ্চ আদালত কমিয়ে ১০ বছর করেছেন। অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় নি¤œ আদালতের দন্ড উচ্চ আদালতে গণভবনের নির্দেশে প্রতিহিংসামুলকভাবে বাড়ানো হয়েছে। যা আদালতের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাজি সেলিমকে কখনো জেলে যেতে হয়নি। নি¤œ আদালতে দন্ডিত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে রিট করে তিনি বার বার জামিন পেয়ে গেছেন। এভাবেই দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
আমরা বারবার বলেছি, ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তথাকথিত দুর্নীতির মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খালেদা জিয়াকে ফাঁসানোর জন্য সরকার আদালতকে ব্যবহার করেছে। ফরমায়েশি রায়ের পর বিএনপি বারবার খালেদা জিয়ার জামিন চাইলেও আদালত জামিন দেয়নি। এভাবেই এরা দেশকে বিপজ্জনক চোরগর্তের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এরা মিথ্যার বাড়াবাড়ি দিয়ে নিজেদেরকে বিজয়ী ভাবছে। আসলে শেখ হাসিনার শাসন ‘৭৫ এর বাকশালী শাসনেরই পুণর্মুদ্রণ।
বন্ধুগণ/
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন হাজী সেলিম উচ্চ আদালতে দন্ডিত আসামি। তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। যারা তাকে দেশ ত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন, তারা উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। আইনের চোখে অপরাধ করেছেন। এই মুহূর্তে তার বিদেশে যাওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হাজি সেলিমের বিদেশ যাওয়া নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। এখন খুরশিদ সাহেব বড় বড় কথা বলছেন, তাহলে তাকে আটকাতে পারলেন না কেন ?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সরকার হাজী সেলিমের বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত নয়। তিনি দেশ ছেড়েছেন কিনা, এটা জানা নেই। “বিমান বন্দর দিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত দাগী আসামি চলে যাচ্ছে অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানেন না। অথচ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এয়ারপোর্টে বিএনপি নেতাদের দুই-তিন ঘন্টা করে বসিয়ে রাখা হয়। হাজি সেলিমের নামে যুবদল নেতা হান্নানসহ আরো অনেক মানুষকে খুনের মামলাসহ মোট ১৩৭টা মামলা ছিল। এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ২০১০ সালে এবং ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে থাকা ১০৫ টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে যুবদল নেতা আবদুল হান্নান হত্যা মামলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গেলেও তাকে জেল খাটতে হয়নি। পরের বছর পুলিশের ওপর হামলা মামলা থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। তার ছেলে ইরফান সেলিমের বাসায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) অস্ত্র পেলেও পুলিশের তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১০ বছরের কারাদন্ডের পর আদালত তাকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। এতোদিনে তার থাকার কথা ছিল কারাগারে, এমপি পদ হারানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক গেছেন। অচিরেই হয়তো জাতি জানতে পারবেন রাষ্ট্রপতি হাজী সেলিমকে ক্ষমা ঘোষনা করেছেন।
সাংবাদিক ভাই বোনেরা/
আপনারা জানেন, মাফিয়া সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত এমনটি জানা-বোঝার পরও দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বিচার বিভাগের মর্যাদাকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে সব সময়ই বিচারবিভাগকে সহযোগিতা করে আসছে। কারণ বিএনপি মনে করে, বিশেষ করে দেশের সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেয়া উচিত নয়।
নির্বিঘেœ হাজি সেলিমের বিদেশ পাড়ি দেয়ার ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের কাছে আদালত অসহায়। র্যাব-পুলিশ যেভাবে বিরোধী দল-মতের মানুষের পেছনে লেগে আছে, দৃশ্যতঃ আদালতের ভূমিকাও প্রায় একই ধরণের। সরকারের মদদে আইন-বিচারের নির্মম প্রবঞ্চনা ও কপোটতার প্রতি জনগণ নিরব হৃদয়শুণ্য থাকতে পারে না।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:07 PM |
Asr | 3:11 PM |
Magrib | 5:32 PM |
Isha | 6:51 PM |