আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:৫৮
এস, এম, মনির হোসেন জীবন- বহুল আলোচিত ঢাকা জেলার সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে ও আঘাত করে হত্যা চেষ্টায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান অভিযুক্ত পলাতক আসামি আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদা’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতারকৃত জিতু ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার হাজী মোঃ উজ্জল হোসেনের পুত্র । এছাড়া আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাব জানিয়েছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এবং র্যাব-৪ এর পৃথক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ধনুয়া গ্রামে যৌথ অভিযান চালিয়ে শিক্ষক হত্যাকান্ডে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত শনিবার (২৫ জুন) ২০২২ ঢাকা জেলার আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ ঐ প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প নিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে (তাকে) এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্হানীয় লোকজন উৎপলকে দ্রুত উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার (২৭ জুন) ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, এঘটনায় নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে গত ২৬ জুন আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে প্রধান আসামী করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ওই মামলায় আরও তিন-চার জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। যার মামলা নম্বর-৮৯। র্যাব জানান, শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। গ্রেফতারের পর জিতু বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। র্যাবের আইনও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত জানান, নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে চাকরীতে যোগদান করেন। তিনি ঐ কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিহত কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধুমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করতেন। এছাড়াও, তিনি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত জিতু বর্ণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল পরে মাদ্রাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। সে ঐ স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। সে স্কুলে সকলের নিকট একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করত; স্কুল প্রাঙ্গনে সকলের সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ব্যতিত স্কুলে আসা-যাওয়া, মটর সাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত।সে তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। পাশাপাশি গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করত। পরিবারের নিকট তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে গ্রেফতারকৃত জিতু তার অনুসারি গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর চড়াও হতো ও বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিত বলে জানা যায়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিতু এ ঘটনার পর গ্রেফতারের আশংকায় সে সন্ধ্যার পর এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে বাসযোগে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে রাত্রীযাপন করে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরীঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপণ করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসযোগে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চযোগে আরিচাঘাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বাসযোগে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব-১ এর সদস্যরা আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদা’কে গ্রেফতার হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদরদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসারগন এসময় উপস্হিত ছিলেন।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:30 PM |
Isha | 6:50 PM |