আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:২৩
এম, এ কাশেম, ‘বিডি’ দিনকাল’ চট্টগ্রাম অফিস: চট্টগ্রামের প্রাণ খ্যাত ‘কর্ণফূলী রক্ষায় খালের মুখে নেট বন্দরের প্রস্তাবে চসিক-সিডিএর দু’রকম বক্তব্য: নৌ মন্ত্রণালয়ের পর এবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কর্ণফূুলী নদী ভরাট রোধ এবং ড্রেজিংয়ের সুফল রক্ষায় সংযুক্ত খালের মুখে গার্বেজ ট্রাপ বা নেট স্থাপন নিয়ে আলোচনা চলে আসছে ২০২১ সাল থেকে। ওই বছরের ২৭ মে অনুষ্ঠিত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেট স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও সিডিএকে। এমনকি এ দু’ সংস্থা যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ব্যবস্থা নেয়ার ও আলোচনা হয়েছিলো ওই সভায়। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২বছর! অথচ, এখনো নগরের কোনো খালের মুখে গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন করা হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কোনো সংস্থা উদ্যোগ ও গ্রহন করেনি এখনো!! এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন নিয়ে ঠেলাঠেলি করছে তিন সংস্থা। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নেট স্থাপনে বারবার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে চসিক দায় এড়াচ্ছে সিডিএর উপর। চসিকের দাবি, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। বর্তমানে ৩৬টি খাল রয়েছে মেগা প্রকল্পের আওতায়। তাই সেখানে কাজ করার এখতিয়ার নেই চসিকের। সিডিএর দাবি, মেগা প্রকল্পে গার্বেজ ট্রাপ স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। তাছাড়া নেট স্থাপনের চেয়ে খালে ময়লা ফেলা রোধে জোর দেয়া উচিত চসিকের। সামগ্রীক বিবেচনায় তাই সিডিএ খালের মুখে নেট স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে তিন সংস্থার এ ঠেলাঠেলিতে সম্পৃক্ত হয়েছে দু’ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চসিককে গার্বেজ ট্রাপ স্থাপনে নির্দেশনা দেয়। এরপর ও আগের অবস্থানেই আছে চসিক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চসিককে দেয়া চিঠিতে বাকলিয়ার চর পযন্ত এলাকায় সম্পাদিত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সুফল ধরে রাখা, নদীর যথাযথ নাব্যতা বজায় রাখা, কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধ এবং চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে প্রকল্প এলাকার অন্তর্র্বতী খালসমূহের মুখে জরুরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে কয়েক স্তরে আধুনিক প্রযুক্তির গার্বেজ ট্রাপ স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয় হয়। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার এক সপ্তাহ আগে ১৫ মার্চ সিডিএর কনফারেন্স হলে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে একটি সভা হয়। ওই সভায় গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন নিয়ে আলোচনা হয়। চসিক সিডিএকে মেগা প্রকল্পের আওতায় গার্বেজ ট্রাপ স্থাপনে প্রস্তাব দেয়। তাতে আপত্তি জানিয়েছিল সিডিএ। এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি খাল পরিষ্কার রাখার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, খাল–নালায় ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে জরিমানাসহ শাস্থি দিতে হবে। গার্বেজ ট্রাপের প্রয়োজনীয়তা : নগরের ৩৩টি খালের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ আছে কর্ণফুলী নদীর। এসব খাল দিয়ে শহরে ময়লা–আবর্জনা নদীতে গিয়ে পড়ে। এছাড়া নগর ও আশেপাশের সাতটি খাল দিয়ে বেশি বর্জ্য পড়ে কর্ণফুলীতে। এর মধ্যে পাঁচটি খালের অবস্থান শহরে। সংযুক্ত খালগুলো দিয়ে নগর প্রতিদিন কর্ণফুলীতে পড়ছে গৃহস্থালীর পাশাপাশি পলিথিন সহ অপনশীল বর্জ্য। এসব বর্জ্যের কারণে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলী। তাই কর্ণফুলী রক্ষায় সংযোগ খালের মুখে গার্বেজ ট্রাপ বা নেট দেয়ার প্রযোজনীয়তা দেখা দেয়। এদিকে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের ড্রেজিং কাজ শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ৯ জুলাই থেকে প্রকল্প এলাকার সদরঘাট অংশের ৪০০ মিটার জেটিতে ৪ মিটার ড্রাফটের লাইটার জাহাজের বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু হয়েছে। সদরঘাট হতে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত প্রকল্প এলাকার নদীর যথাযথ প্রশ^স্ততা দৃশ্যমান হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় ৫০ দশমিক ৫০ লক্ষ ঘনমিটার মাটি বা বালি ড্রেজিং ও বর্জ্য অপসারণ করে চার মিটার গভীরতায় নাব্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং পরবর্তী সংরক্ষণ ড্রেজিং কার্য পরিচালিত হচ্ছে। এ ড্রেজিংয়ের সুফল পেতেও গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল ও নভেম্বর মাসে চসিক ও সিডিএকে পত্র দিয়ে গার্বেজ ট্রাপ বসানোর প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চসিক ও সিডিএ উদ্যোগ না নেয়া নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। বন্দরের দাবি, খালগুলোর মুখে নির্দিষ্ট দূরত্বে কয়েক স্তরে আধুনিক প্রযুক্তির ডিসপজাল ব্যবস্থাসহ গার্বেজ ট্রাপ স্থাপন করা হলে শহরের ময়লা –আবর্জনা সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়বে না। এতে নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা নিশ্চিত করণ: সহ শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। কী বলছে চসিক ও সিডিএ : সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যম কে বলেন, বর্তমানে নগরের খালগুলো জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। সেখানে সিডিএ কাজ করছে। তাই আপাতত আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। মেগা প্রকল্পের কাজ শেষে খালগুলো বুঝিয়ে দিলে তখন আমাদের করার সুযোগ হবে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে মিটিং হয়েছে। সেখানে খালের মুখে গার্বেজ ট্রাপ দেয়ার জন্য আমরা সিডিএকে বলেছি। প্রকল্প রিভাইস করলে সেখানে গার্বেজ নেট অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুরোধ করেছি। রফিকুল ইসলাম বলেন, নেট দিলে সুফল পাওয়া যাবে। এক জায়গায় ময়লা এসে জমলে সেখান থেকে পরিষ্কার করা সহজ হয়। শেখ মুজিব রোডে বঙ কালভার্টের্ ও আমরা এক সময় নেট দিয়েছিলাম। মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, আমাদের প্রকল্প থেকে কোনো গার্বেজ ট্রাপ দেবো না। কারণ এটা ‘প্রæটফুল সলিউশন’ (ফলপ্রসূ সমাধান) না। গার্বেজ ট্রাপ দেয়ার অর্থ হবে মানুষকে খালে ময়লা ফেলায় আরো উদ্বুদ্ধ করা। তখন মানুষের ধারণা হবে, ময়লা ফেললে সমস্যা নেই, নেটে তো আটকে যাবে। তাই গার্বেজ ট্রাপের বদলে খালে ময়লা ফেলাটাই বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমর ৩৬টি খালে কাজ করছি। ধরলাম সেখানে দুইটা করে ৭২টি নেট বসানো হলো। এসব নেট তো প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। সে জনবল কি সিটি কর্পোরেশনের আছে? তারা তো বলে খাল পরিষ্কার করার মতো বরাদ্দ তাদের নেই। এ অবস্থায় নেট কীভাবে পরিষ্কার করবে? তিনি বলেন, নেটগুলো কিন্তু ম্যানুয়ালি পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া নেট তো আজীবন ভালো থাকবে না। সেগুলো নষ্ট হবে। রিপেয়ার না করলে তখন তো আবার ময়লা জমবে। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা আমাদের প্রকল্প থেকে নেট দেবো না।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |