মনির হোসেন জীবন – রাজধানীর উত্তরা থেকে র্যাপিড ক্যাশ নামক অ্যাপ ব্যবহারকারী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা এবং মাষ্টার মাইন্ড মহিউদ্দিন ওরফে মাহির (৩১) এবং এজেন্টসহ মোট ২৬ জনকে আটক করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এদের মধ্যে ১১ নারী এবং ৭ তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এটিইউ পুলিশ বলছে, গ্রেফতারকৃত মাহির রাজধানীর রমনা থানার নিউস্কাটন এলাকার গোলাম মোহাম্মদ এর পুত্র। অভিযানকালে তাদের নিকট থেকে ৬ টি ডেক্সটপ, (সিপিও), ১০ টি ল্যাপটপ, একাধিক ডিভাইস ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এটিইউ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার সোনারগাঁও জনপথ সড়কের বাসা নং- ৬ ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে গোপনে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা মাহির এজেন্ট সহ ২৬ জন সদস্যকে আটক করা হয়। অভিযানটি বিকেল ৫ টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯ টায় শেষ হয়। আজ বুধবার দুপুর ১২ টায় রাজধানীর বারিধারা ব্লক বাড়ি- ৩৫, সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ এন্টি টেররিজম ইউনিট এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এটিইউ সাইবার ক্রাইম উইংয়ের এসপি ফারহানা ইয়াসমিন এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে এটিইউ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান, এএসপি (মিডিয়া) ওয়াহিদা পারভীনসহ সংস্হাটির অন্যান্যা উধর্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এসপি ফারহানা ইয়াসমিন জানান, র্যাপিড ক্যাশ একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপটি এন্ড্রয়েড মোবাইলে ডাউনলোড করার সাথে সাথেই মোবাইলটি সম্পূর্ণ এক্সেস নিয়ে নেয় (যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর সমস্ত কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারি তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য) । বাংলাদেশে ব্যবহারযোগ্য যে কোন মোবাইল সিমের নাম্বারের মাধ্যমে অ্যাপটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই র্যাপিড ক্যাশ ব্যবহারকারীকে পাঁচশো বা এক হাজার টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেন এবং ওই দিন থেকেই ওই টাকার উপর প্রায় একশ টাকা হারে সুদ আরোপ করে। ঋণ প্রদানের কয়েক দিনের মধ্যেই লোন পরিশোধ করার জন্য বা কমপক্ষে সুদের টাকা পরিশোধ করার জন্য র্যাপিড ক্যাশ তাদের হট লাইন নাম্বার (০১৯৫৬৭২৮৭৭৬) এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন প্রদান করে। এটিইউ সূত্র জানিয়েছে, কোন গ্রাহক যদি এই উচ্চ হারের সুদ প্রদানে অস্বীকৃতি প্রদান করে তবে, র্যাপিড ক্যাশ তাকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় তথ্যের জনসমক্ষে প্রকাশ। ব্যবহারকারী নিজের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে যখন ঋণ এবং সুদের টাকা প্রদানে সম্মতি প্রদান করে তখন র্যাপিড ক্যাশ থেকে তিনটি নগদ এজেন্ট (০১৭৪৫৭৫৭৯৫৭, ০১৯৬৯২৭৬২৩৯ ও ০১৮৬১৫৭২৭২৭ ) নাম্বার প্রদান করা হয়। কোনো গ্রাহক এই উচ্চ হারের সুদ প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে র্যাপিড ক্যাশ। প্রতারণার মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ। ব্যবহারকারী নিজের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে যখন ঋণ এবং সুদের টাকা প্রদানে সম্মতি প্রদান করে তখন র্যাপিড ক্যাশ হতে নগদ বা বিকাশ এজেন্ট নম্বর প্রদান করা হয়।
এসপি ফারহানা ইয়াসমিন জানান, একজন ভুক্তভোগী রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার উপশহর গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র মো: আবুল এহসান (৪১)। সে এই সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানায় র্যাপিড ক্যাশের প্রতারণা সংক্রান্তে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগে র্যাপিড ক্যাশ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারণা করে অনুমতি ব্যাতিত তার নিজস্ব নগদ অ্যাকাউন্টে অবৈধ ই-ট্রানজেকশন করে এবং সকল তথ্য হ্যাক করে তার আপত্তিকর ছবি প্রচার করে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা তিনি এটিইউকে জানান। পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের সাইবার অ্যাপে কয়েকটি অভিযোগ পাই যে, ঋণ দেওয়ার নামে ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে ব্লাকমেইল করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, শুধু র্যাপিড ক্যাশ নয়, তারা ভারত ও পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক কিছু অ্যাপস ব্যবহার করছে। যেসব ব্যবহার করে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তানেও ঋণের নামে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করছে ইউপিআই। পাকিস্তান ও ভারতেও তাদের এজেন্ট রয়েছে। উত্তরার ওই অফিসে তরুণ-তরুণীদের অনেককে ১৪/১৫ হাজার টাকায় কল সেন্টারে কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজ ভালো হলে তাদেরকে পারসেন্টেজও দেওয়া হয়। কেউ না পারলে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়। দেখা যায়, সবাই অনর্গল বাংলাসহ হিন্দি ও উর্দুতে কথা বলতে অভ্যস্ত। তারা উত্তরার এ নতুন অফিসটি মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল। মূলহোতা মাহের সম্পর্কে এসপি ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, মাহের চীনে পড়াশুনা করেছেন। সেখানেই তিনি চাইনিজ এই অ্যাপসটি ব্যবহার করেছেন। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। সেটির প্রেক্ষিতে তদন্ত করছিল এটিইউ’র সাইবার ক্রাইম উইং। সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এসপি ফারহানা ইয়াসমিন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাপিড ক্যাশ নামক অ্যাপ ব্যবহার করে লোন প্রদান এবং এর টাকা ফেরত দেওয়ায় লোককে বাধ্য করার কথা স্বীকার করেছে।