এম, এ কাশেম, চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিষাধী সওদা করতে গিয়ে মানুষের ক্রন্দনের অবস্থা! বাজারের প্রতিটি জিনষপত্রের দাম আকাশচুম্বী। পয়সা ওয়ালা খ্যাত ধনী ব্যাক্তিদের তাতে কোনো সমস্যা না হলে ও সারাদিন কর্ম করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে। এমন অনেক রয়েছেন, যারা সারাদিন কর্ম করে যে টাকা পান সে টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষাধী না কিনেই বাড়ি/বাসায় ফিরে আসতে হচ্ছে। অন্যান্য জিনিষাধীর কথা আপাতত: বাদ রেখে কাঁচা তরি-তরকারির কথা প্রকাশ করার দরকার। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু ৩৮/৪০ টাকা, বরবটি ৫০/৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০/৭০ টাকা, পটল ৭০/৮০ টাকা (প্রকারভেদে) , ঝিঁয়া ৫০/৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ৫০/৬০ টাকা, শাক্ ৩০ টাকা প্রতি মুঠো (অল্প কয়েকদিন আগে ও ছিলো ১০/১৫ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৩০/১৪০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ২২০/২২৪০ টাকা! ওই ক্যাটাগরি অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা তরি-তরকারির মূল্যের কথা শুনে অনেকেরই চোখে পানি এসে যায়/যাচ্ছে। দেশী মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি, ফার্ম মুরগি ২৩০/২৪০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০/৮০০ টাকা। পাঙ্গাশ মাছ অল্প কয়েকদিন আগে ও যেখানে কেজি বিক্রি করা হয়েছে সেখানে আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০/১৯০ টাকা। অনুরূপ ভাবে অন্যান্য মাছের দাম ও অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ড সদর ও মীরের হাট বাজারে গিয়ে ওই অবস্থা দেখা যায়। বাড়বকুণ্ড বাজারে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক স্কুল শিক্ষক ও বাজার করতে আসা নার্গিস আক্তার নামে এক গৃহিনীর সাথে কথা হয়। তারা লোক লজ্জায় বেশী কিছু না বললে ও শুধু বলেন, আমাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। মীরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভা বাজারে গেলে কথা হয় নিন্ম আয়ের পরিবারের কর্তা হিসেবে বাজার করতে আসা সেলিম উদ্দিন, আবদুল হাই ও শরিফা খাতুন সহ আরো ক’জনের সাথে। বাজারের জিনিসপত্রের দাম এর কথা বলতে গেলে তাদের চোখে পানি টলটলায়মান দেখা যায়। তারা আক্ষেপ করে বলেন, মুসলমান হয়ে গরুর মাংস কিনেছি এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কবে খেয়েছি তার সঠিক দিন-তারিখ আর স্মরণে আসছে না। এখন দেখছি গরুর মাংস’র মতো মুরগি ও ঠিক ওই রকম হয়ে যাওয়ার পথে! পরিবারের জন্য একটা মুরগি কম করে হলে ও ২ কেজির উর্দ্ধে থাকতে হবে। আর সেই ২ কেজির উর্দ্ধে একটা মুরগি কিনতে গেলে কমপক্ষে ৫০০ টাকার দরকার কিন্তু পরিবারের কর্তার দৈনিক ইনকাম কতো? এর বাইরে চাউল, তৈল সহ আনুষাঙ্গিক জিনিষাধী দিবে কে? চট্টগ্রামের সর্বাধিক বড় ও পাইকারি কাঁচা তরি-তরিকারির বাজার খ্যাত চট্টগ্রাম শহরের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের কাঁচা তরি-তরিকারির মহাজন/ব্যবসায়িদের মধ্যে ক’জনের সাথে আলাপ করে জানতে চাইলে তারা বলেন, বলতে গেলে বর্তমানে কাঁচা তরি-তরিকারি পাওয়া ও এক ধরনের দুষ্প্রাপ্যতা হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেক দুর-দুরান্ত থেকে তা সংগ্রহ করে আনতে যে দাম ও খরচ পড়ছে তাতে আমাদের ও বিরক্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। অথচ, উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা, মীরসরাই উপজেলা, বারইয়ারহাট পৌরসভা বাজার এবং চট্টগ্রাম শহরের রিয়াজ উদ্দিন বাজার সহ কোথাও সরকারি ভাবে কোনো তদারকি এবং পৌর বাজারে ঠিক মতো বাজারে মনিটরিং এর তেমন কোনো ব্যবস্থা রয়েছে এমন কথা উপরোল্লিখিত কেউ-ই জানান দিতে পারেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন মুদি মালের দোকান গুলোতে আরো বে-হাল অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেই হয়তো না খেয়ে থাকার যন্ত্রণায় মারা ও যেতে পারে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলির ভান্ডার এ পরিপূর্ণতায় থাকা কয়েকজন জানালেন, এখন ও সময় ফুরিয়ে যায়নি সরকারি ভাবে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করে অসাধু ব্যবসায়িদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্বল্প আয়ের অভাবী মানুষজনদের বাঁচানোর।