- প্রচ্ছদ
-
- প্রধান খবর
- আমারও ইচ্ছে করে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে, আমি কেন পারি না! আমার বাবাকে ফেরত চাই: মিম
আমারও ইচ্ছে করে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে, আমি কেন পারি না! আমার বাবাকে ফেরত চাই: মিম
স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি
প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৩ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
বাবুল তালুকদারঃ আমারও ইচ্ছে করে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে। আমার বন্ধুরা বাবার সাথে স্কুলে যায়। আমারও ইচ্ছে করে বাবার সাথে স্কুলে যেতে। আমি কেন পারি না! ১০ বছর হয়ে গেছে বাবাকে খুঁজছি। কিন্তু আমি আমার বাবাকে পাই না। আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। কথাগুলো বলছে ১১ বছরের শিশু লামিয়া আক্তার মিম।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মায়ের ডাক নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে এভাবে বাবাকে ফিরত চেয়ে কান্না করছিল সে। তার বাবার নাম কাউসার হোসেন। যিনি ১১ বছর আগে গুম হয়েছেন। তখন মিমের বয়স ছিল দেড় বছর। শুধু মিম নয় এভাবে আর্তনাদ অসংখ্য স্বজনহারা পরিবারের। রাষ্ট্রের কাছে দাবি প্রিয়জনকে ফেরত দেয়ার।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সরকার বিগত এক দশক ধরে বিরোধী মতের মানুষের ওপর গুম, খুন, হত্যা ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছে। আজও তাদের খোঁজ নেই। আয়না ঘরের নামে নির্যাতন সেল তৈরি করেছে। এসমস্ত অবিচার বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে গুমের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সরকারের সময় ফুরিয়ে আসছে। প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার হবে এ বাংলাদেশে। কেউ ছাড় পাবে না।
সংগঠনটি বলছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গুমের ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই সময়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলের বহু নেতাকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করা হয়েছে। ২০১০ সালে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম এবং ২০১২ সালে ইলিয়াস আলীসহ অনেককে গুম করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ বিরোধীদলের বহু নেতাকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করা হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকের স্বজনরা জানিয়েছেন, তাদের স্বজনদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৯৮ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। এই গুমের ঘটনাগুলোর সাথে আইনপ্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত বলে ভিকটিম পরিবারগুলো অভিযোগ করেছেন।
তারা আরো জানান, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য কর্তৃক গুমের ঘটনা ঘটলেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত গুমের বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। অথচ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিলে বাংলাদেশে নির্যাতন বিষয়ক পরিস্থিতির পর্যালোচনার পর জাতিসঙ্ঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি তাদের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে অঘোষিত আটক ও গুমের ঘটনাগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রকাশের ব্যর্থতায় উদ্বেগ জানিয়েছে। এছাড়া জাতিসঙ্ঘের পক্ষে ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন অ্যানফোর্সড অর ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বহুবার এই সব গুমের বিষয়ে তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সফরে অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের আসতে অনুমতি দেয়নি। ‘মায়ের ডাক’ মনে করে গুমের ঘটনাগুলোর সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জড়িত থাকার কারণে তাদের বাংলাদেশ সফরে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
মায়ের ডাক বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি গুমের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছে।
Please follow and like us:
20 20