আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:০৪
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লকার থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণালঙ্কার চুরির রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়নি। শুধুমাত্র ৮ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত চুরির বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, যেখান থেকে স্বর্ণ চুরি হয়েছে সেখানে যারা দায়িত্ব পালন করতেন তাদের মধ্যে কেউ এই স্বর্ণ চুরি করেছে। কারণ যে গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরি হয়েছে সেখানে কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঘুরেফিরে সেখানে শিফ্টভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেন ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাই তারা ছাড়া বাইরের কেউ স্বর্ণ চুরি করার সুযোগ পাবে না। কিন্তু সেখানে বা আশেপাশে সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে কে চুরি করেছে সেটি বের করতে পারছে না পুলিশ। এ ছাড়া কাস্টমের পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়েছে সেখানে আসামি হিসাবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। সূত্রগুলো বলছে, গুদামে আনুমানিক ২০০ কেজির বেশি স্বর্ণ ছিল।
যার মধ্যে ৫৫ কেজির বেশি চুরি হয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি করা হয়। বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরি হওয়া ও কাস্টম হাউসের গুদামে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক।
স্বর্ণ চুরির এই ঘটনা সর্বপ্রথম শনিবার ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে মামলার কথা জানানো হলেও পরে মামলা হয় অজ্ঞাতদের আসামি করে। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টম হাউস। স্বর্ণ চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা চার রাজস্ব কর্মকর্তারা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। আর চার সিপাহী হলেন- রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।
ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারির লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে যায়। চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্যসামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা বলে জানান। তিনি যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক ও জব্দ হওয়া পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ ৪ জন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান।
গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঢাকা কাস্টম হাউসে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। গোডাউন পরিদর্শনে গিয়ে গোডাউনের ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান এবং গোডাউনের পূর্বপার্শ্বের ওপরের দিকে এসির বাতাস বের হওয়ার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান।
একইসঙ্গে তিনি গোডাউনে কর্মরত এ, বি, সি ও ডি শিফটের কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ (সবাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) এবং রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে ৪ সিপাহীকে আলমারির লক ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউ কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন। পরে দিনভর গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পণ্য আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২৩ সালে উদ্ধার হওয়া ৪৮টি ডিএম বার যার ওজন ৮.০২ কেজি ও ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে আটক ৩৮৯টি ডিএম বার যার মোট ওজন ৪৭.৪৯ কেজি সোনা আলমারির লকার ভেঙে চুরি হয়েছে।
ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, একজন রাজস্ব কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আমাদের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সিসিটিভির আওতায় ছিল না, এটি অবাক করার মতো বিষয়। সিসিটিভি না থাকায় কে বা কারা সোনা সরিয়েছে তা স্পষ্ট হচ্ছে না। ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদ বলেন, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এজন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কাস্টমস সূত্র জানায়, চুরি হওয়া স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৪৫ কোটি টাকা হবে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে সোনা চুরি যাওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দুদক। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এখন থানা কর্তৃপক্ষ যদি দেখে এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ, তাহলে তারা দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে বা অন্য কোথাও আটক হওয়া সব স্বর্ণই কিছু প্রক্রিয়া শেষে পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। এরপর যদি ওই স্বর্ণের দাবিদার না থাকে, তখন তা নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। আর দাবিদার থাকলে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত নিলামের জন্য অপেক্ষা করা হয়।
নিলাম কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন করে প্রতিনিধি থাকেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আটক স্বর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে অস্থায়ী খাতে জমা থাকে। নিলাম কমিটি বিক্রির টাকা নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। বিমানবন্দর থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণও একই প্রক্রিয়ায় নিলাম করে এর অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |