আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৮:২১
‘বিদেশী নিষেধাজ্ঞার খবরে খুশি না হয়ে নিজেদের শক্তিতেই সরকার সরাতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
‘‘ দুর্নীতি… আমরা হাজার বার বলছি, সব সময় বলছি, গোটা দুনিয়া বলছে যে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠি আকুন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। এখন তারা(সরকার) অস্বীকার করে… তারা দুর্নীতি করে না। এখন দেখেন… এই যে, আজকেই খবর এসেছেন যে, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র… তার পরিবারসহ। কেনো? দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা এবং জনগনের বিশ্বাস ক্ষুন্ন করা….।”
‘‘ অনেকেই খুশি হবেন যে, আজিজের(সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ)স্যানশন এসেছে…. আমি মনে করি যে, ওটা হচ্ছে আরেকটা বিভ্রান্ত করা। এরকম বিভ্রান্ত হচ্ছি আমরা সবসময়…তখন র্যাবের বিরুদ্ধে হয়েছে, পুলিশের নয় জন কর্মকর্তা র্যাবে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও স্যানশন হয়েছিলো। এতে করে কি তাদের (সরকার) সেই ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? বন্ধ হয় নাই।”
মহাসচিব বলেন, ‘‘ সেজন্য বলছি, নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে, নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের শক্তি নিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমার নিজের ঘর যদি নিজে সামলাতে না পারি, অন্য কেউ ঘর সামলিয়ে দেবে না।”
সরকার যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে তার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্র যন্ত্রকে, আপনারা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন সেনাবাহিনীকে, ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন বিচার বিভাগকে, প্রশাসনকে এবং আজকে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন, ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছেন…. এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, মিডিয়ার ভাইয়েরা আছে তারাও এখন মন খুলে, প্রাণ খুলে রিপোর্ট লেখতে পারেন না, প্রতিটিন শব্দ চয়ন লেখতে চিন্তা করতে হয় এরজন্য জেলে যেতে হবে কিনা? এরজন্য মামলা খেতে হবে কিনা… এই হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা।”
‘‘ এজন্য আমাদেরকে জনগনের আরো ঐক্যবদ্ধ করে রাস্তায় নেমে সোচ্চার হতে হবে। রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আমরা অন্য কোনো পথ চিনি না। আমাদেরকে প্রকাশ্যে সামনে এসেই লড়াইটা করতে হবে।”
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের উদ্যোগে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয় যে আমরা নাকি উখাত করতে চাই। আমরা উখাতের কথা বলিনি… উখাত করতে যাবো কেনো?”
‘‘আমরা ভোটের অধিকার চাই, সেই ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরাজিত করব। সেই ভোটের অধিকার অর্জন করার জন্য আমাদের সবাইকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমি সব সময় বলি, আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি…. আমরা কোনো রেডিকেল পার্টি বা রেভুলেশনারী পার্টি না।লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হচ্ছে যে, একটা নির্বাচন…সেই নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়, অবাধ হয়, সরকার যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেই জায়গাটা আমাদেরকে যেতে হবে।”
‘‘ কেউ আমাদেরকে সেটা করে দেবে না,… আমাদেরকে সেটা অর্জন করতে হবে।”
‘মালয়েশিয়ার উদাহরণ টানলেন ফখরুল’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গত কয়েকদিন আগে আমি একটা নিউজ দেখছিলাম আল-জাজিরাতে । আনোয়ার ইব্রাহীমের নাম আপনারা অনেকে কথা শুনেছেন… উনি এখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। উনি ১৫ বছর আগে যখন মালয়েশিয়ার মাহাথীর মোহাম্মদের যে সরকার সেটাতে ছিলেন উনি… উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন।”
‘‘ মাহাথীর মোহাম্মদের সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে তিনি ছেড়েই দিলেন। তারপরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-টামলা আরোপ করে তাকে একেবারে কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন… দীর্ঘকাল তিনি কারাগারে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি কাজ শুরু করেছেন, তিনি তার স্ত্রী, তার কণ্যা নতুন পার্টি তৈরি করেছিলেন… এখানে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে তিনি আজকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। অর্থা জনগণের আস্থাটা পুরোপুরি অর্জন করেছেন। এই যে ধর্য্য, এই যে শুধু একটা আবেগের মধ্যে না গিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগুনো… এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইব্রাহিমের উদাহরণ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমি মনে করি. আসুন আমরা না চাইলে কোনো কিছু দেবে না আমাদের। অবশ্যই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ আরও হতে হবে, আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।”
‘‘ আমরা যুগপৎ আন্দোলনে জোট করেছি, বিভিন্ন জোট… আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলেছি, একই সঙ্গে কাজ করেছি। আন্দোলনের প্রক্রিয়া বলতে কি? এই জোট আরও শক্তিশালী হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তি… এই শক্তিটাকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করব এই বিশ্বাস আমাদের আছে।”
‘কোনো নির্বাচন নেই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে যখন সরকার যখন বলে তারা গণতন্ত্রকে সুসংহত করছে, গণতন্ত্রকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিচ্ছে। তখন বিএনপি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কি বলব? মানুষ কি সব আহম্মক হয়ে গেছে। আপনারা প্রথম দিকে যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করেছেন… সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে এনেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আপনারা পার্লামেন্টারি গভমেন্ট থেকে সরে গিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভমেন্ট করেছিলেন… আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন এটা ছিলো আপনাদের উদ্দেশ্য।”
‘‘ আজকে একদলীয শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে বাকশালী শাসন চালু করতে তারা বহুদূর এগিয়ে গেছেন। এবারে করেছেন তারা সুকৌশলে। যেটা গণতন্ত্রের যে লেবাস একটা ছদ্মবেশি আল-খেল্লা.. এই নিয়ে তারা নির্বাচন করে। বলছে যে, আমরা তো নির্বাচন করছি, বিরোধী দল নির্বাচনে না আসলে আমরা কি করব? এমন নির্বাচন করছে যে, যে নির্বাচনে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহন করতে চায় না। ৬৩টা নির্বাচন বর্জন, একটা দলকে তারা কোনো রকমে রেখেছে ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে আসনবন্টন করে তাদেরকে রেখেছে। তারাও বলেছে তখনও বলেছে, এখনো বলছে, দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।জিএম কাদের সাহেব আগেই বলেছেন, এখানে নির্বাচন হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ যা চাইবে সেটাই হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা তো বার বার বলেছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন চাই।আমরা চাই, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার যে ক্ষমতা সেটা তারা প্রয়োগ করতে পারুক আর এটাতে যাকে তারা ক্ষমতায় নিয়ে আমরা মেনে নেবো।”
‘‘ আওয়ামী লীগের এতো ভয় কেনো একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে । ভয় এজন্যে যে তারা গত ১৫/১৬ বছরে যে অপকর্মগুলো করেছে সেই অপকর্মগুলো সারা দেশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও তাদের সমর্থন খুঁজে পাবে না। এখন যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে দেখেছেন তো তারা নিজে নিজেরা কিভাবে লড়াই করছে, কিভাবে ভোট নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভোটের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করছে…. তারপরও ভোট কেন্দ্রে ভোটার আসছে না। এই নির্বাচনে মানুষ অংশ নিচ্ছে না,এটাতে স্বস্ফূর্তভাবে নিচ্ছে না। কারণ তারা বুঝে গেছে যে, এই নির্বাচনে তো কোনো লাভ নাই, যে নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, যে নির্বাচনে কোনো পরিবর্তন আসবে না, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠি্রা ক্ষমতাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করবে সেই নির্বাচনে গিয়ে কি লাভ?”
জাগপার উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শফিউল আলম প্রধানের ভূমিকা শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
২০১৭ সালের ২১ মে শফিউল আলম প্রধান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার প্রতিষ্ঠিত জাগপার দুই অংশ আলাদা আলাদাভাবে স্মরণ সভা করে। জাতীয় প্রেসক্লাবে শফিউল আলম প্রধানের ছেলে রাশেদ প্র্রধানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ উলামা দল, কৃষক দল, জাগপার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য্ রাখেন।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |